যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আল কায়েদার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে এক গোপন নথি প্রকাশ করেছে। গোপন থাকা ওই নথিতে দুজন হামলাকারীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্তে পাওয়া তথ্য উপাত্ত উঠে এসেছে। এদের একজনের নাম নাওয়াফ আল-হাজমি ও অপরজন হলেন খালিদ আল-মিদহার।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিমান ছিনিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ার ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা করেছিল। বিমান ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই ছিলেন সৌদি আরবের নাগরিক। ওই হামলার পর বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন ঘটে। দেশে দেশে মুসলমানদের জোরদার হয় গোয়েন্দা নজরদারি। বদলে যায় আরও অনেক কিছুই।
সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিমান ছিনতাইকারী দুজনকে যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্বরত একজন সৌদি কনস্যুলার কর্মকর্তা এবং সন্দেহভাজন একজন সৌদি গোয়েন্দা এজেন্টের সহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে এফবিআই। সে তদন্তে পাওয়া তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছে ২০১৬ সালের এই নথিপত্রে।
বিবিসি জানিয়েছে, ১৬ পৃষ্ঠার ওই নথি ব্যাপকভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে। এটি এমন একটি উৎস গোপন সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে একাধিক সৌদি নাগরিকের সঙ্গে দুই বিমান ছিনতাইকারী নাওয়াফ আল-হাজমি ও খালিদ আল-মিদহারের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০০০ সালে এই সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এফবিআই প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পর তারা ওমর আল বায়োমির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা পান। ওমর আল বায়োমি এই দুজনের দোভাষী হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তাদের ভ্রমণ, আবাসন ও আর্থিক সুবিধাও দিয়েছিলেন। ওই সময় নিজেকে ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওমর আল-বায়োমি নিয়মিত লস অ্যাঞ্জেলেসের সৌদি দূতাবাসে যাতায়াত করতেন। সেখানে তাকে উষ্ণ আতিথেয়তা দেওয়া হতো।
এফবিআইয়ের নথি বলছে, ওমর আল-বায়োমি ছাড়াও দুই ছিনতাইকারীর সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসের কিং ফাহাদ মসজিদের ইমাম সৌদি নাগরিক ফাহাদ আল থুমাইরির সম্পর্ক ছিল। থুমাইরি চরমপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। থুমাইরি ও বায়োমি ৯/১১ হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যান।
৯/১১ হামলায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে এই গোয়েন্দা নথি প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, ওই হামলা সম্পর্কে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা আগে থেকে জানলেও সেটি হামলা থামাবার চেষ্টা করেন নি। নথি প্রকাশের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর চাপ দিচ্ছিলেন। এমনকি নথি প্রকাশ না করলে বাইডেনকে ৯/১১-এ নিহতদের স্মরণসভায় যোগ দিতে না দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
নথি প্রকাশের আগে ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের দূতাবাস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। যদিও হামলাকারীদের সঙ্গে সৌদি সরকারের সম্পর্কের অভিযোগ অস্বীকার করে।
এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৯/১১-এর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে সৌদি আরবের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এর আগেও এফবিআইয়ের তদন্তের নথি প্রকাশের দাবি উঠেছিল। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে প্রকাশ করেন নি। ২০২১ সালে জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর তদন্তসংশ্লিষ্ট নথি প্রকাশ করার আদেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার আগে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, এএফপি।
লেখক: সাংবাদিক।