১০২ মিনিটের ৯/১১-জঙ্গি হামলা বদলে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বকে। বিশ্বব্যাপী ৯/১১ হামলা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ মারা যায়। সে হামলা নিয়ে জানা-অজানা কিছু তথ্য।
এই হামলার ফলে তিন হাজারেরও বেশি শিশু অভিভাবকহীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৭ জন এমন শিশুর জন্ম হয় যাদের বাবা এই হামলায় মারা গেছেন।
৯/১১ হামলার পর জানা যায় এক সাহসী হিরোর কথা। নাম রোসেলে। হলুদ রঙের এই ল্যাবরেডর কুকুরটি তার অন্ধ মালিককে পথ দেখিয়ে নর্থ টাওয়ারের ৭৮ তলা থেকে নিরাপদে নামিয়ে বন্ধুর বাড়ি নিয়ে যায়। তখন জ্বলছিল টুইন টাওয়ার।
পুরো আগুন স¤পূর্ণ নিভিয়ে ফেলতে দমকল বাহিনী কর্মীদের ১০০ দিন লেগেছিল। অনেক দমকলকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
পেন্টাগনের যেখানে ফ্লাইট-৭৭ আঘাত করেছিল, সে জায়গাটির দেয়াল বহু ডলার খরচ করে মেরামত করা হয় মাত্র ক’ বছর আগে।
৯/১১ হামলায় যেসব বিমান অপহরণকারীরা হামলার আগের রাতটি কাটিয়েছিল এক দামি হোটেলে। এই হোটেলের পাশেই মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির অফিস।
যখন প্রথম হামলা হয় তখন মার্কিন অফিসার জন পেরি পুলিস হেডকোয়ার্টারে তার অবসরের কাগজে সই করছেন। হামলার খবর শুনে সই শেষে পেরি ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। সেদিন টাওয়ার ভেঙে পড়ায় মারা যান পেরি। তিনিই ছিলেন সেদিনের হামলায় নিহত একমাত্র অফ ডিউটি অফিসার।
যে কো¤পানি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মালিকানার দায়িত্বে ছিল তারা সেই ৯/১১ দিনটিতেই জঙ্গি হামলা প্রতিহত করবার বিষয়ে ওই ভবনেরই ৮৮ তলায় এক মিটিং ডেকেছিল। কিন্তু একজন সদস্য আসতে পারবেন না বলে ঠিক আগের দিনেই সেই মিটিংটি বাতিল করা হয়।
৯/১১ হামলার পর আমেরিকা জুড়ে একটি মাত্র বিমানকে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বিমানটি উড়েছিল স্যান দিয়েগো থেকে মায়ামি গিয়েছিল। বিমানটিতে ছিল সাপে কামড়ানোর একটি দামি প্রতিষোধক। অ্যান্টি ভেনম এই ওষুধটি আইসিইউতে ভর্তি এক রোগীর জন্য খুব দরকার ছিল।
৯/১১ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলায়, ওয়াশিংটন, ডিসির পেন্টাগন ও শ্যাঙ্কসভিলে প্রায় ৩ হাজার মানুষ মারা যায়। এতে ৪শ’ পুলিশ অফিসার এবং দমকল বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ৯/১১ হামলাই প্রথম সন্ত্রাসী হামলা ছিল না। ১৯৯৩ সালের ফেব্রæয়ারিতেও সেখানে এক বোমা হামলায় ৬ জন নিহত হয়।
যে কোনও কর্মদিবসে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারে ৫০ হাজার কর্মচারী কাজ করত ও অতিরিক্ত ৪০ হাজার কর্মচারী কমপ্লেক্সে থাকত।
৯/১১ হামলার পর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার স্থান থেকে ১.৮ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ সরাতে ৯ মাস সময় লেগেছিল।
ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩-এর যাত্রীরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে বিমান হামলার খবর শুনে হাইজ্যাকারদের কাছ থেকে বিমান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। যার ফলে ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুর পরিবর্তে পেনসিলভানিয়া মাঠে বিমানটিকে বিধ্বস্ত করে।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলার ভিডিও সঙ্গে সঙ্গে প্রচারিত হলেও পেন্টাগন আক্রমণের কোনও ভিডিও ফুটেজ ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসে নি।
যদিও নিউ ইয়র্ক সিটির পুলিশ ও ফায়ার ডিপার্টমেন্ট দুয়েরই নিজস্ব জরুরি উদ্ধার তৎপরতা ছিল, কিন্তু এমন বড় ঘটনায় এই দু বিভাগের সমন্বিত কোনও তৎপরতা ছিল না।
৯/১১ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা আমেরিকার মাটিতে বিদেশী হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সাইটের ধ্বংসস্ত‚প থেকে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
৯/১১ থেকে বেঁচে যাওয়া এবং উদ্ধার কর্মীদের মধ্যে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেসের ঘটনা সাধারণ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের আশেপাশের লোকদের অ্যাজমা ও ফুসফুসে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।
অনুস্বর ডেস্ক
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।