সেদিন যদি ওদের বিমানে উঠতে না দিতাম!’ ২১ বছর ধরে এই অপরাধবোধ নিয়েই বেঁচে আছেন অ্যালেক্স। ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ১১ সেপ্টেম্বরের সেই ভয়াবহ দৃশ্য আজও চোখে ভাসে গোটা বিশ্বের মানুষের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিমানের ধাক্কায় হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার জমজ ভবন। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো দুটা টাওয়ার ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আক্রমণ করা হয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনেও। ২০০১-এর সেই হামলার পর ২১ বছর কেটে গেছে, এখনও নিজেকে প্রতিনিয়ত দায়ী করেন ভগান অ্যালেক্স।
বিমানবন্দরে দুই ছিনতাইকারী প্রবেশ করার সময় ভগান অ্যালেক্স ছিলেন টিকেট এজেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারী দুজনার লাগেজ পরীক্ষা হয় তারই তত্ত্বাবধানে। সেদিন যাত্রী দুজন নির্ধারিত সময়ে পৌঁছুতে পারে নি। তারা দেরী করে আসবার পরও অ্যালেক্স তাদেরকে বিমানে ওঠার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আর তার কয়েক ঘণ্টা পরেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় টুইন টাওয়ার। পরদিন সকালে যখন এফবিআই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখনই অ্যালেক্স জানতে পারেন কত বড় ভুল তিনি করে ফেলেছেন।
ভগান অ্যালেক্স ছিলেন ডুলাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টিকেট এজেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বরের দিনটি এখনও ভুলতে পারেন না অ্যালেক্স। দুই ছিনতাইকারী সালেম ও নাওয়া আল হাজমি যখন বিমানবন্দরে এসে ঢুকেছে অ্যালেক্স তখনদায়িত্ব পালন করছিলেন। তার কাউন্টারেই এসেছিল সালেম ও নাওয়া আল হাজমি। ফ্লাইট-৭৭ ধরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেকটাই দেরী করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু তারা ছিল ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রী। ফলে যাত্রীদের সুবিধার স্বার্থেই তাদেরকে বিমানে চড়বার ব্যবস্থা করে দেন আ্যালেক্স। আর তার কিছুক্ষণ পরেই পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে ভেঙে পড়ে ফ্লাইট-৭৭।
অ্যালেক্স মনে করেন, তিনি চাইলেই ওই দুজনকে বিমানে চড়ার অনুমতি নাও দিতে পারতেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও নিজেকে দায়ী করি। আজও মনে হয় সেদিন যদি ওদের ঢুকতে না দিতাম, যদি এজেন্টদের বলে দিতাম, এই দুজনের আসতে অনেক দেরী হয়ে গেছে তাই এদের পরের বিমান ধরতে হবে। এটুকু করা তো আমার কাছে কোনও ব্যাপারই ছিল না। দুপুরে বিমান ধরতে বলতেই পারতাম আমি।’
সালেম ও নাওয়া আল হাজমি এখনও অ্যালেক্সের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তিনি বলেন, দুজনকেই একটু অদ্ভুত লেগেছিল তার। একজন ছিল একটু কড়া ধাতের। অন্যজন আর একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল, তার চোখমুখ কোনও এক অজানা আনন্দে জ্বলজ্বল করছিল। কার্যত সে বিমানবন্দরেই নাচতে শুরু করেছিল। অ্যালেক্স দেখে ভেবেছিলেন প্রথমবার বিমানে ওঠার খুশিতে বোধহয় নাচছে ছেলেটি। এমন অদ্ভুত আচরণ করেছিল বলেই মনে আছে অ্যালেক্সের। দ্বিতীয়জনকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও সে বিশেষ কোনও উত্তর দেয় নি, শুধু হেসে চলে গিয়েছিল।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই ভয়াবহ হামলায় কেঁপে ওঠে গোটা বিশ্ব। আমেরিকাজুড়ে তখন স্বজন হারানোর কান্না। সেসময় অ্যালেক্সের মাথাতেও আসে নি এতে তার কোনও ভ‚মিকা থাকতে পারে। পরের দিন দুপুরে এফবিআই থেকে ফোন আসে তার কাছে। এফবিআই তাকে নিয়ে গিয়ে বিমান ছিনতাইকারীদের ছবি দেখায়। দেখেই চিনতে পারেন অ্যালেক্স। ওই বিমানের সব ক্রুদেরও চিনতেন তিনি। ৯/১১ কমিশনের রিপোর্টেও ছিল অ্যালেক্সের নাম। পরে ২০০৮ সালে আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাজ থেকে অবসর নেন ভগান অ্যালেক্স।
১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৯৭৭ জন। আফগানিস্তানে বসে আল-কায়েদা জঙ্গিরা পরিকল্পনা করে চালিয়েছিল সেই হামলা। আর তাতেই ধ্বংস হয়ে যায় আমেরিকার টুইন টাওয়ার। মোট ৪টি বিমান সেদিন ছিনতাই করেছিল আত্মঘাতী জঙ্গিরা।
Leave a comment