বর্ষ ২, সংখ্যা ২, মার্চ ২০২২
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
মোহাম্মদ আসাদ খান
৪০ পৃষ্ঠা
দাম
যুক্তরাষ্ট্রে ২.৯৯ ডলার
বাংলাদেশে ৩০ টাকা
মুক্তির যুদ্ধ: অবদমনের বিরুদ্ধে উচ্চকিত প্রতিবাদ
যখন লড়াই বেধে যায় তখন লড়াই আসলে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বেধে যায় না, বাধে সবলের সঙ্গে দুর্বলের। কেননা সবল দাবি করে শ্রেষ্ঠত্ব। দুর্বলের সে দাবি নেই। দুর্বল যেহেতু জানে সে দুর্বল তাই লক্ষ্যটি তার উঠে দাঁড়াবার। সে নিমগ্ন থাকতে চায় উঠে দাঁড়াবার প্রস্তুতিতে। কিন্তু সবল সেটি চায় না। কেননা তার ভয় আছে। দুর্বল উঠে দাঁড়ালে সে শোষণ চালাতে পারবে না। তার নিরাপদ আবহ অনিরাপদ হয়ে উঠবে। তখন সে লড়াইটা আর লড়াই থাকে না, আগ্রাসী হয়ে যায়। সবল চায় দুর্বলকে অবদমিত রাখতে। দুর্বল শুরুতে মেনে নেয়। নেয় কি আসলে? না, নেয় না। কিন্তু কন্ঠটি তুলে উচ্চকিত হয় না কেবল। ভান করে মেনে নেয়ার। যখন কন্ঠ তুলে উচ্চকিত হয় তখনই বাধে বিপত্তি, সবলের কাছে।
একাত্তরে এই রকমের বিপত্তিতেই পড়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান। পড়ে দিশেহারা হয়েছিল। ২৫ মার্চের গণহত্যা দিয়ে শুরু করেছিল অবদমন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হেরাল্ড পত্রিকা লিখেছিল, ‘২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।’ তারপর পুরো নয়টা মাস জুড়ে মেরে ফেলেছে বাংলাদেশের তিরিশ লক্ষ মানুষকে। ধর্ষণ করেছে তিন লক্ষেরও বেশি নারীকে।
যখন যুদ্ধ বেধে যায় তখন দু’টা জিনিস দরকারি হয়ে পড়ে। একটা হলো, নিজেরা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো সঙ্গতি। অন্যটি সমর্থন। আন্তর্জাতিক সমর্থন। পাশের দেশ ভারত শুরু থেকে বাংলাদেশকে সকল ধরনের সমর্থন দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে, যুদ্ধ করতে পারার প্রশিক্ষণ দিয়েছে, এমনকি যুদ্ধ করতে অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ সকলই দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন।
কিন্তু ভারতের একলা সমর্থন আমাদের জন্যে যথেষ্ট ছিল না। আমাদের জন্যে আরো আরো দেশের আমাদের পক্ষে জোট বাঁধবার খুব করে দরকার হয়ে পড়েছিল। এই সমর্থনগুলো জোগাড় করেছেন প্রবাসী বাঙালিরা। তাঁরা বিদেশের মাটিতে সুতীব্র কন্ঠে উচ্চকিত হয়ে প্রতিবাদে বাংলাদেশে চলতে থাকা গণহত্যার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন।
অনুস্বর তার বয়সের এক বছর পেরিয়ে এবারের সংখ্যাটিতে দু মাসে পা দিল। এ সংখ্যার নির্বাচিত বিষয় ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী।’ কিন্তু আমরা খুব বিস্ময় নিয়ে দেখতে লাগলাম দু তিনজন লেখক ছাড়া বাকিরা এ বিষয়ে লিখতে যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আমরা ভেবেছিলাম প্রবাসীরা বিষয়টিতে উৎসাহ দেখাবেন। দেখা গেল, আমাদের এ ভাবনাটিও সঠিক ছিল না। আমরা তখন নিজেরাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চাইলাম। এবং আরও বিস্ময় নিয়ে লক্ষ্য করলাম, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীরা যে বিশাল অবদান রেখেছেন, তার আলোচনা কয়েকটা জায়গায় সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। এবং যখনই এ মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাটা আসে, তখন সে বিষয়গুলোই বারবার আলোচিত হয়। এর একটা কারণ হয়ত মোটা দাগে ভূমিকাটিকে দেখবার প্রয়াস। কিন্তু সে সময় দেশের বাইরে থাকা প্রতিটি বাঙালি নিজের সাধ্যমতো কিছু না কিছু করছেন, করবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁদের সে প্রচেষ্টা আড়ালেই থেকে গেছে। কেউ কেউ নিজের বা নিজেদের উদ্যোগটিকে বই লিখে ছাপিয়ে স্মৃতি কথাদের জন্মসম্মুখে আনবার প্রচেষ্টাটি চালিয়েছেন বটে, কিন্তু সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা করলে তা একেবারেই গৌণ।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের সপক্ষে থাকা প্রতিটি মানুষেরই ভূমিকা রয়েছে। সে ভূমিকাগুলোর সবটা সংগৃহীত হয় নি কখনোই। পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন আর সবটা খুঁজে নেবার সময়ও নেই। পাওয়াও যাবে না। কিন্তু উদ্যোগ নিলে অনেকটাই আসতে পারত। অন্তত কিছুটা তো আসত যা রয়ে গেছে আড়ালেই। আমাদের প্রয়াসটি সে আড়ালটিকে সরিয়ে উন্মোচন করবার ভাবনারই ফলাফল।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দারুণভাবে যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা। এইটি আমাদের জন্যে চমকপ্রদভাবে ও আপ্লুত হওয়ার মতো একটি অর্জন। ভাবুন তো, পাকিস্তানি সেনাদেরকে অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ আর পৃথিবীর নৃশংসতম গণহত্যাটি চালাতে দেখে ভিন্ন মাটির, ভিন্ন ভাষার, ভিন্ন সংস্কৃতির, স¤পূর্ণ অজানা-অচেনা কিছু মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠল, কেউ কেউ রুখেও দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়াল, অনেকে নিজের জীবনের ঝুঁকিটি নিয়ে বিশ্বকে জানাবার দায়টি নিজ দায়িত্বে কাঁধে তুলে নিল! এই মানুষগুলোর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা সীমাহীন।
সেকারণে অনুস্বর তার পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে বিদেশীদের কথাটিও উল্লেখ করল। কিন্তু এইটি একেবারেই যথেষ্ট নয়। এ বিষয়টি নিয়ে যে কাজ, সেটি প্রচুর অবকাশ দাবি করে। সেকারণে আগামীতেও কাজ করবার ভাবনা অনুস্বরের রয়েই গেল।
অনুস্বরের এবারের সংখ্যায় লিখেছেন:
সুলতানা পারভিন শিমুল
আজিজুল পারভেজ
আফসার বিপুল
হোসেন ইমাম
মাসুদ অর্ণব
জাহান আরা
মাহমুদ জামাল কাদেরী
লুৎফুল হোসেন
ফাইজুল ইসলাম
ড. নাজমুন খাতুন
দীলতাজ রহমান
আইয়ুব হোসেন
আহসান কবির
শাহ্ জে. চৌধুরী
ও
মুবিন খান
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।