বর্ষ ২, সংখ্যা ৫, মার্চ ২০২২
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
মোহাম্মদ আসাদ খান
ইলাস্ট্রেশন
আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ
দাম:
বাংলাদেশে ১০০ টাকা
যুক্তরাষ্ট্রে ৯.৯৯ ডলার
বাজেট ২০২২-২৩ ও প্রত্যাশা
অনুস্বরের বর্তমান সংখ্যাটি জুন মাসকে সামনে রেখে প্রকাশিত হলো। ফলে সঙ্গত কারণেই এবারের সংখ্যাটির বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাজেট ও অর্থনীতি’।
‘বাজেট’ শব্দটি ইংরেজি শব্দ। ‘বাজেট’-এর কোনও বাংলা প্রতিশব্দ নেই। বাজেট সংক্রান্ত সকলখানেই ‘বাজেট’ শব্দটিকেই ব্যবহার করা হয়। ইংরেজিতে বাজেট শব্দটি এসেছে ‘বুজেট’ থেকে। বুজেট হলো থলি। মধ্যযুগে টাকা রাখার জন্যে চামড়ার তৈরি এক ধরনের থলি ব্যবহার করা হতো, সে থলিটিই হলো বুজেট।
রবার্ট ওয়ালপুল ১৭২৫ থেকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী এবং কার্যত প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে সারা বছরই তিনি কর হ্রাস বা বিলুপ্তির দাবি পেতেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাত থেকেই নতুন কর আরোপ বা করের হার পরিবর্তনের সলাপরামর্শ আসতে থাকত। নতুন ব্যয়ের দাবিও বিভিন্ন মহল তাঁর কাছে পাঠাত। এসব দাবি তিনি একটি ‘বুজেটে’ বা মানিব্যাগে ভরে রাখতেন। অর্থবছরের শেষ দিকে যখন বাজেট তৈরি শুরু হতো, তখন তিনি সেই কাগজগুলোর ভিত্তিতে তার বাজেট প্রণয়ন করতেন। এভাবেই মানিব্যাগ থেকে বাজেট ব্যবস্থার উৎপত্তি হলো।
বাজেট মূলত একটি রাজনৈতিক দলিল; রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে বাজেট তৈরি হয়; প্রতিটি আয়ব্যয়ের সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। অন্যদিকে বাজেট সব আয়ব্যয়ের সিদ্ধান্তের অর্থনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে। বাজেটের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মূল্য শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না; অর্থনীতিতেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। বাজেটের পরিণাম যা-ই হোক না কেন, রাজনীতিবিদেরা বাজেট নিয়ে রাজনীতি করবেনই। বাজেটের সংখ্যা শুধু অর্থ আয়ব্যয়ের সংখ্যা নয়, এর প্রতিটি সংখ্যা রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়।
বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ হলো তীব্র মূল্যস্ফীতি। অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। বেশিরভাগ দেশই তাদের নিজস্ব মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। এই সারিতে বাংলাদেশও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। বিগত ৪০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি আর কখনও এতটা ঊর্ধ্বমুখী হয় নি।
বাংলাদেশে আগামী ৯ জুন সংসদে নতুন বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এবার বাজেটে ঘাটতি ধরা হবে মূল বাজেটের এক তৃতীয়াংশ- ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন এই বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী তাঁর পদে আসীন হওয়ার পর বাজেটকে ‘ব্যবসায়ীবান্ধব’ বাজেটে পরিণত করেছেন। সুদ নীতিকে তাদের অনুকূলে সংশোধন করেছেন। সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে নিরুৎসাহিত করেছেন। অল্প-স্বল্প করে উদারভাবে অপ্রদর্শিত টাকা প্রদর্শনের সুযোগ দিয়েছেন। কর মওকুফ, কর অবকাশ, কর মুক্তি দিয়েছেন। এবং সবই তিনি করেছেন বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে অনিশ্চয়তা। বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা বিরাজমান সেটি বিবেচনায় নিয়েই এবারের বাজেট হবে। দেশের অর্থনীতি কীভাবে আরও গতিশীল করা যায়, সে বিষয়গুলো বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন।
আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার প্রবৃদ্ধিনির্ভর গতানুগতিক উন্নয়ন কৌশল থেকে বেরিয়ে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও ডলারের দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেই চলেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এমনিতেই কমে গেছে। তার ওপর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখন ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানোই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া দরকার বলে মনে হয়। চলতি অর্থবছরে কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়ানো খুব করে দরকার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি।
করোনা মহামারিতে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদের ব্যাপারে ইতিবাচক পদেক্ষেপ নেওয়াটাও জরুরি।
এবারের সংখ্যায় লিখেছেন:
মাহমুদ জামাল কাদেরী
লুৎফুল হোসেন
মাসুদ অর্ণব
ইসরাত জাহান
আফসার বিপুল
ড. নাজমুন খাতুন
রীনা ঘোষ
ড. ফরিদ খান
রেখা আক্তার
হোসেন ইমাম
জাহান আরা
আলী আহমাদ রুশদী
আহসান কবির
শাহ্ জে. চৌধুরী
মুবিন খান
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।