বর্ষ ২, সংখ্যা ২, ফেব্রুয়ারি ২০২২
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
মোহাম্মদ আসাদ খান
৪০ পৃষ্ঠা
দাম
যুক্তরাষ্ট্রে ২.৪৯ ডলার
বাংলাদেশে ২৫ টাকা
কৃষকের ভোগান্তিতে ভুগবে গোটা জাতি
অনুস্বর আত্মপ্রকাশ করেছিল গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর চলতি পথে একটুও না থেমে ধীর অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে পথ চলতে চলতে অতিক্রান্ত হয়েছে পুরো একটি বছর। বারোতম সংখ্যাটি বেরুল গেল জানুয়ারিতে। বর্তমান সংখ্যাটি তেরোতম সংখ্যা। এই তেরোটি সংখ্যা প্রকাশে এসেছে অনেক চড়াই উৎরাই। ছিল ঘটনাবহুল। ছিল সহযোগিতা-অসহযোগিতা, অনেক। তবে সহযোগিতার পাল্লাটাই ওজনে ভারি ছিল। দিনের পর দিন সে ওজন বেড়েই চলেছে। শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত যারা অনুস্বরের সঙ্গে থেকেছেন, হাতটি ধরে পথটি চলেছেন, তাঁদের সকলের কাছে অনুস্বর ও অনুস্বর পরিবার কৃতজ্ঞ। আমরা আগামী পথচলাতেও আপনাদেরকে সঙ্গে চাই। ঠিক এইভাবেই চাই।
ফেব্রুয়ারি মাস হলো ভাষার মাস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস এই ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে। বাঙালি জাতি পেলো মাতৃভাষার মর্যাদা আর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ, ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিংবা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটি বস্তুত কৃষি নির্ভর বটে। সেকারণেই এবারের অনুস্বরের বিষয় ছিল ‘কৃষক ও কৃষি।’
এই জানুয়ারিতেই খবরের কাগজে শিরোনাম হয়েছে, কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না। সবজির আড়তে শিম, বেগুন, গাজর, মুড়িকাটা পেঁয়াজ, ফুলকপি, করলা, মিষ্টি কুমড়া, শসা ও টমেটোসহ বাজারে বেড়েছে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির সরবরাহ। এতে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা দাম কমায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। যদিও খুচরা বাজারে কোনো কৃষি পণ্যের দামই কমে নি। সবজির এই দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা বলছেন, আমরা যদি উন্নতি করতে না পারি, তাহলে চলব কীভাবে? এই দেশে কৃষকের এই হাহাকার নতুন নয়। প্রবহমানকাল থেকেই কৃষকের কণ্ঠে-বুকে এই হাহাকারটি বেজে আসছে আর কৃষক দারুণ হতাশায় এইটি বলে আসছেন। দাম না পেয়ে ক্ষেতে ফসল পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত যে খাতটির নাম – কৃষি খাত। অথচ বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষের জীবিকা কৃষি নির্ভর। দেশের খাদ্য সরবরাহের প্রধান উৎসও কৃষি। বাংলাদেশে শ্রমিক হিসেবে আইনগত কোনো স্বীকৃতি কৃষকের নেই। সেকারণে শ্রমিক হিসেবে আইনি সুবিধার পাওয়ার কোনো অধিকার কৃষকের পক্ষে তৈরি হয় নি। কৃষক সংঘবদ্ধ হবে, ট্রেড ইউনিয়ন গড়বে- বাস্তবসন্মত তেমন কোনো ভিত্তি কৃষকের পক্ষে নেই। এদেশে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কৃষি শ্রমিকের কোনো কাজ থাকে না। অভাবের সময় কম দামে আগাম শ্রম বিক্রি করেন তাঁরা। এদের বড় একটি অংশ দেশের শহরগুলোতে পাড়ি জমিয়ে রিকশা চালান কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে অথবা ভিন্ন কোনো মাধ্যমে শ্রম বিক্রি করেন। কাগজে কলমে বলা হলেও সরকারি ঋণ সুবিধা তাদের ভাগ্যে জোটে না। মহাজন ও বেসরকারি ঋণে শোষণের শিকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর অসুস্থতায় কোনো নিরাপত্তা নেই কৃষি শ্রমিকের। অনেক সময় কাজের ন্যায্য মজুরি পায় না। কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। নারীপুরুষ মজুরিবৈষম্য বিদ্যমান। সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের সকল এলাকায় নারী কৃষি শ্রমিকদের মাঠে কাজ কাজ করবার সুযোগ নেই।
কথা হলো, যেসব সুবিধার কথা সরকার বলছে সেসবের কতটা কৃষকের কাছে পৌঁছাচ্ছে? বাজারে যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে তাহলে যতই কৃষিবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়া হোকনা কেন, তার কোনোটিই কৃষিকের কাছে পৌঁছুবে না।
খবরের কাগজে খবর এসেছে, ‘কৃষি ঋণের ‘সুফলবঞ্চিত’ ক্ষুদ্র চাষিরা।’ তাছাড়া ব্যাংকগুলো ছোট অংকের ঋণ দিতে চায় না। আর ঋণ নিতে গেলে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ফলে দরকার হলেও ঋণ নিতে উৎসাহী হন না কৃষক। এছাড়া কৃষি ঋণ পেতে ঘুষ দাবি ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্য চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে টাকা দরকার হলে আশা, ব্র্যাকের মতো এনজিও থেকে ঋণ নেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। পঞ্চাশটি বছর পেরিয়ে গেলেও কৃষকের ঋণ সুবিধা থেকে লাল ফিতার গেরোটি খুলতে পারল না কেউ। কৃষককে এখনো মহাজন থেকে এনজিও ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ করতে হয়। এমন কি ফসল বিক্রি করতে গেলেও তাকে লোকসান গুনতে হয়। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন ফায়দা না নিতে পারে- এইটি নিশ্চিত করা গেল না এখনো।
ভুলে গেলে চলবে না, কৃষক যদি ক্ষতির মুখে পড়েন, তাহলে কৃষক একলা ভুগবেন না, ভুগবে গোটা জাতি।
এবারের সংখ্যায় লিখেছেন:
সেলিনা হোসেন
ড. নাজমুন খাতুন
আজিজুল পারভেজ
মাহমুদ জামাল কাদেরী
ফাইজুল ইসলাম
ড. মো. জামাল উদ্দিন
লুৎফুল হোসেন
সুলতানা পারভীন শিমুল
জাহান আরা
রেজাউল করিম সিদ্দিক
হোসেন ইমাম
নাজমুল ইসলাম
শাহ্ জে. চৌধুরী
মুবিন খান
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।