বর্ষ ২, সংখ্যা ৪, মার্চ ২০২২
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
মোহাম্মদ আসাদ খান
ইলাস্ট্রেশন
আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ
দাম:
বাংলাদেশে ১০০ টাকা
যুক্তরাষ্ট্রে ৯.৯৯ ডলার
অনিশ্চিত সাধারণের ঈদ আনন্দ
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে অনুস্বর-এর বর্তমান সংখ্যাটি ঈদ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হলো। যদিও এবারের সংখ্যাটি মহান মে দিবস নিয়ে করবার কথা ছিল। এপ্রিল সংখ্যায় সে ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সিদ্ধান্ত হলো, আমরা চাইছি মে সংখ্যাটি ঈদ সংখ্যা হিসেবেই প্রকাশিত হোক। কিন্তু ঈদ সংখ্যা করতে গেলে যে প্রস্তুতির দরকার পড়ে তার কিছুই আমাদের ছিল না। ফলে ‘বর্ধিত কলেবর’ শব্দবন্ধটি আমরা ব্যবহার করতে চাইছি না।
বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। মাসব্যাপী রোজা পালন শেষে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলেই আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ উৎসব। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষ মুসলমান হওয়ায় ঈদুল ফিতর বাংলাদেশেও সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। গেল দু’টা বছরে করোনা ভাইরাসের কারণে ঈদ উৎসবের আনন্দে ভাটা পড়েছিল। করোনা ভাইরাস এসে জীবনের বাস্তবতাকে উল্টেপাল্টে দিয়ে গেছে। আমরা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছি মানবতার সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতার বিপর্যয়। সে বিপর্যয় এখনও সবটা কাটে নি। যদিও দু’ বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে যে চিত্র আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সে চিত্রটি এখন নেই।
তবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের চেয়েও বড় ভাবনা তৈরি হয়েছে। খবরের কাগজে খবর এসেছে, অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরে পানি ঢুকে কৃষকের ফসল তালিয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন হাওর অঞ্চলে আধাপাকা বোরো ফসলি জমি এখন পানির নীচে। টাকার অঙ্কে এখন পর্যন্ত ৮-৯ কোটি টাকার ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা ঋণ নিয়ে ফসল উৎপাদন করেন। এমনিতেই কৃষক পায় না ফসলের ন্যায্য দাম। এখন এই ঋণ তাঁরা এখন কিভাবে পরিশোধ করবেন- সে ভাবনাটি জানাতে জানাতে অশ্রু ঝরাচ্ছেন।
অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সংস্কৃতি হলো রমজান মাস এলেই তারা সকল পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। সে সংস্কৃতি এবারেও নিরাপদে বহাল আছে। নিত্যই বাড়ছে ভোগ্যপণ্য থেকে নিত্য দরকারি সকল পণ্যের দাম। বাজারে গিয়ে মানুষ নিজেদেরকে অসহায় মনে করে। টিসিবির ট্রাকের সামনে উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে হতাশা জানাচ্ছেন। এর সঙ্গে বেড়েই চলেছে মুদ্রাস্ফীতি।
যানজটের কথা আর নতুন করে বলবার কিছু নেই। যানজটের কারণে জীবন এখন স্থবির। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিরা বলছেন, ঢাকার জনজীবন অচল করে দেওয়া দুর্বিষহ এই যানজট উন্নয়নের অংশ। খুব তাড়াতাড়িই যানজট দেশের নানান প্রান্তে পৌঁছে যাবে। ফলে এ বিষয়ে কিছু না বলাই শ্রেয়। কিন্তু বুক চাপড়ে হাহাকার করতে থাকা কৃষক কিংবা টিসিবির ট্রাকে ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কিনতে না পারা মানুষটির ঈদ কতটা আনন্দদায়ক হয়ে আবির্ভূত হবে- সেইটি একটি দরকারি প্রশ্ন বটে। এ প্রশ্নের উত্তরটি কে বলতে পারবেন আমাদের জানা নেই।
তবে উন্নয়ন মানে ফ্লাইওভার কিংবা স্থাপনা নির্মাণ নয়, এইটি আমরা জানি। ঠিক যেমনিভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারাটাই বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞান ব্যাপারটা বুদ্ধিবৃত্তিক। চাই বুদ্ধির চর্চা। দরকার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির। সংস্কৃতিও এর অংশ। তেমনি উন্নয়ন মানে নানামুখী আর নানা দামের শিক্ষা ব্যবস্থা নয়, যানজটে জীবন স্থবির হবে না, পথ চলতে ধূলা থেকে রক্ষা পেতে অথবা রাজপথের ডাস্টবিন উপচে আবর্জনায় হাত দিয়ে নাকমুখ চেপে ধরতে হবে না, দোকানি ক্রেতার কাছে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকবার সাহসটি পাবেন না, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ ছিনতাই করবে না, পথ চলতে শিশুটি কোলে নিয়ে কেউ এসে হাত পেতে সামনে দাঁড়াবে না। আর মানুষের দুর্ভোগ, ভোগান্তি, অসহায়তা আর জীবনের দুর্বিষহতা নিয়ে রসিকতা করতে পারাটাও উন্নয়ন নয়। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নগুলো যখন ঘটবে, তখন আর যেচে উন্নয়নের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে না।
মানুষ বাঁচতে চায়। বাঁচার জন্যেই সে নিত্য লড়াই করে চলেছে। কিন্তু সমাজে প্রতিষ্ঠিত বৈষম্যটি মানুষের বেঁচে থাকবার আকাঙ্ক্ষা ও অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে। তার পরিশ্রমকে অবমূল্যায়ন করছে। তার বাঁচার লড়াই নিয়ে রসিকতা করছে। কেননা বৈষম্যটি শিক্ষা থেকে শুরু হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে অর্থনীতিকেও গ্রাস করে ফেলেছে। এই ব্যবস্থা ও মানসিকতার পরিবর্তন খুব করে দরকার। আর পরিবর্তনের এ দায়টি সরকারকেই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনতারটা দায়িত্ব আর সরকারেরটা দায়।
অনুস্বরের প্রতিনিধি, পৃষ্ঠপোষক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক।
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।