সাতচল্লিশে দেশভাগের পর বাঙালি জাতির প্রথম মহত্তম ঘটনা ভাষা আন্দোলন। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটি আপাদমস্তক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছাদিত ছিল। যেহেতু কেবল ধর্মীয় উপাদানে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়, সে কারণে রাষ্ট্র বা জাতিগত বিকাশের অন্যান্য উপাদানগুলো কেবল উপেক্ষিত নয় উসুল করার চক্রান্ত শুরু হয়। তারই ফলশ্রুতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা ও অস্বীকার করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অংশের মানুষের মাত্র দশ ভাগ মানুষের ভাষা ছিল উর্দু। যা সফল বিবেচনায় সংখ্যালঘু ভাষা এবং রাষ্ট্রীয় মার্যাদা আবার দাবিদার হবার মতো নয়। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারত প্রত্যাগত মুহাজিরিন এবং উর্দু ভাষী। সেটা একটি ক্ষুদ্র চারণ হলেও বৃহত্তম উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি ও পাকিস্তানের অপরাপর জাতিসত্ত্বা সমূহের আত্মমর্যাদা সহযোগে আত্মবিকশিত হবার প্রথম ও প্রধান পথরুদ্ধ করে দেয়া। এরই প্রেক্ষিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র ধর্মের অবস্থিত পরেই প্রধানমন্ত্রী জিন্নাহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসে সাফ ঘোষণা করেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। এরপর কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র দেশের ছাত্র সমাজ এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর উদযোগ ও আহবানে বাংলা ভাষার সপক্ষে ঢাকাসহ দেশব্যাপী জোরালো আন্দোলন শুরু হয়।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিত অনুসন্ধানে আমরা কয়েক বছর পেছনের ঘটনারাজী পর্যালোচনা করতে পারি। এর মধ্যে বেশকিছু চমকপ্রদ ও সম্ভবত অনুদঘাটিত তথ্য আমাদের গোচরে আসবে। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রথম মহত্তম অর্জন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের অন্যতম অঙ্গবিশেষ এই প্রায় সমালোচিত অধ্যায়গুলোকেও সামনে আনার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।
এখানে আমরা সংক্ষেপে মতবিশ্লেষণের দেশ বিভাগের পূর্ব ও পরবর্তীকালের কিছু ঘটনারাজীর বিবরণ তুলে ধরতে সচেষ্ট হবো। প্রায় অনালোচিত এই ইতিহাস ভাষা আন্দোলনের অনিবার্য আকর উপাদান।
ভাষা আন্দোলনকে কেবল বায়ান্নর একুশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা বস্তুনিষ্ঠ। এ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সাতচলিশ সাল থেকে। এমনকি দেশ বিভাগের পূর্বেও সচেতন বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদগণ রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন। ভাষা আন্দোলনের সাথে আমাদের আবেগ অনুভূতি চেতনা প্রবলভাবে জড়িয়ে আছে। এই আবেগের উত্তাপে এবং উচ্ছাসে যেন এ ঐতিহাসিক আন্দোলনের প্রকৃত ঘটনা এবং তথ্য হারিয়ে না যায়, সে জন্য আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। ইতিহাসের আলোকে বস্তুনিষ্ঠভাবে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ সুবিন্যস্ত করা প্রয়োজন।
দেশ বিভাগের পূর্বে লাহোর প্রস্তাবের আলোকে ‘উত্তর-পশ্চিম’ ও ‘পূর্বাঞ্চলে’ দুটি স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করে সচেতন বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকগণ রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নটি আলোচনা করেছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নটির তাৎপর্য করে যায় নি। পাকিস্তান-পূর্বকালে মুজিবুর রহমান খাঁ রচিত ‘পাকিস্তান’, হাবিবুল্লাহ্ বাহারের ‘পাকিস্তান’, তালেবুর রহমানের পাকিস্তানবাদের ক্রমবিকাশ’ ও ‘সর্বহারাদের পাকিস্তান’ শীর্ষক গ্রন্থসমূহে এবং ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, কবি ফররুখ আহমদ, আবদুল হক, মাহবুব জামাল জায়েদী প্রমুখের লেখায় রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গটি স্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। [দ্রষ্টব্য: ‘বাঙালী মুসলমানদের মাতৃভাষা প্রীতি’, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্, ‘ভাষা আন্দোলনের আদি পর্ব’, আবদুল হক।]
রেনেসাঁ সোসাইটি ও সাহিত্য সংসদ
বিভাগ-পূর্বকালে কলিকাতা ও ঢাকায় ‘পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি’ ও ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’ নামে যে দুটি সাংস্কৃতিক সংস্থা ছিল তাদের আলোচনা প্রভাতে ও বহুবার বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা আলোচিত হয়েছে। এখানে প্রসঙ্গত উলেখযোগ্য যে, তখনও লাহোর প্রস্তাব অনুসারে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়ার কথা।
আজাদের একটি সম্পাদকীয়
বাংলাকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবী লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পূর্বে কংগ্রেসেরে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পক্ষ হতে ‘হিন্দী’ কে সমগ্র ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার জোর প্রচেষ্টা ও তৎপরতা চলে। সমগ্র ভারতের এক রাষ্ট্রভাষা করার জোর প্রচেষ্টা ও তৎপরতা চলে। সমগ্র ভারতকে এক রাষ্ট্রে পরিণত এবং এক জাতীয়তায় আবদ্ধ করার জন্য এই প্রচেষ্টা ও কৌশলে গান্ধিজী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী বলে পরিচিত সকল নেতৃবৃন্দ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা করার পাল্টা দাবী হিসেবে ভারতের উর্দু সমর্থক মুসলমানদের পক্ষ হতে ‘উর্দু’কে সমগ্র ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা ও দাবী উত্থাপিত হয়। এ প্রসঙ্গে এলাহাবাদ হাইকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মোহাম্মাদ সোলেমানের মন্তব্য উলেখ্য করা যেতে পারে। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুবাদ সংঘের এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘ভারত বিভিন্ন ভাষাবিদ অধিবাসীদের মধ্যে এমন একটি ঐক্যসূত্রের যোগ রহিয়াছে যাহা ইউরোপের কোন দেশের মধ্যে নাই।’
ভারতবর্ষে এক ভাষা ও এক জাতীয় বর্ণমালা প্রচলনের আদর্শ হয়তো অনাগত বহু বর্ষ যাবত আদর্শের রাজ্যেই থাকিয়া যাইবে; তথাপি ভারতবর্ষে অন্তত: একটি ভাষা আছে যাহা ভারতের সমস্ত প্রধান প্রধান শহরে প্রচলিত, সর্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক লোক যে ভাষায় অভিজ্ঞ এবং পৃথিবীর অধিক স্থানের লোক যে ভাষায় কথা বলিয়া থাকেন।…. ভারতবর্ষের ভাষা জগতে ইহা (উর্দু) এক নুতন অভ্যুদয়, বিগত বহু শতাব্দী যাবত হিন্দু ও মোছলেম সংস্কৃতির ঘাত-প্রতিঘাত ও মিলন-মিশ্রণের ভিতর দিয়া এই ভাষার উদ্ভব হইয়াছে।” [আজাদ, ১ম বর্ষ ১৫১ সংখ্যা]
হিন্দী এবং উর্দুর পাল্টা দাবী হিসেবে সমগ্র ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষার দাবী পেশ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ১৯৩৭ সনের আজাদের একটি ঐতিহাসিক সম্পাদকীয়তে বলা হয়:
ভারতের রাষ্ট্রভাষা
ভারতবর্ষ একটা প্রকাণ্ড মহাদেশ এবং উহার বর্তমান প্রদেশগুলি বস্তুত: অন্যান্য অঞ্চলের এক একটা দেশের সমান, বরং কোন কোনটা অপেক্ষা বড়। প্রকৃতির অনুশাসনে এই সব দেশের আবহাওয়া ও জল মাটির ন্যায় এইসব দেশ বা প্রদেশের অধিবাসীদের ভাবে ও ভাষায়, আকৃতি ও প্রকৃতিতে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান আছে। এই সমস্ত পার্থক্যকে বিস্মৃত হইয়া সমগ্র ভারতে এক রাষ্ট্রে পরিণত করিয়া তাহার জন্য একটি রাষ্ট্রভাষা করিতে যাওয়া. আবশ্যক হইলেও স্বাভাবিক হইতেছে না।
নেহেরু রিপোর্টের যুগে মহাত্মা গান্ধী রাষ্ট্রভাষা উপলক্ষে হিন্দী ও উর্দুর পরস্পরবিরোধী দাবীর মীমাংসা করিয়া দিয়া বলিলেন- আমাদের রাষ্ট্রভাষা হইবে হিন্দুস্থানী, আরবী বর্ণমালায় লিখিত হইলে যাহার নাম হইবে উর্দু এবং দেবনাগরী বর্ণমালায় লিখিত হইলে যাহাকে বলা হইবে হিন্দী। কিন্তু নেহেরু রিপোর্টের ফলাফল সুবিধাজনক বিবেচিত না হওয়াতে মহাত্মাজী অচিরে তাহার মত ও পথ বদলাইয়া ফেলার জন্য বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতার মত নতুন ফর্মূলার সন্ধানে থাকিলেন। তখন প্রকাশ্যভাবে হিন্দীর অনুকূলে ও উর্দুর প্রতিকূলে ক্রুসেড না হইলেও বস্তুতঃ হিন্দুস্থানীয় নামে হিন্দীকে চালাইয়া দিবার আয়োজন চলিতে লাগিল। এই অবসরে মহাত্মাজী হিন্দী অভিযানের প্রাথমিক উদ্যোগ আয়োজন শেষ করার পর অকুণ্ঠিত কণ্ঠে ঘোষণা করিয়া দিলেন, ভাবী রাষ্ট্রীয় ভাষা হইবে- হিন্দী-হিন্দুস্থানী।
এই হিন্দী-হিন্দুস্থানীয় অমিশ্র সংযোগের রহস্যভেদ বাহ্যতঃ একটু কঠিন। কিন্তু ইহার ইতিহাসটা জানা থাকিলে উহার তত্ত্ব কথাটা সহজে বোঝা যাইতে পারিবে। মহাত্মাজী মহাত্মা মানুষ। কিছুদিন পূর্বে তিনি ঘোষণা করিয়াছিলেন যে, ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষা হইবে হিন্দিও নয় উর্দুও নয়- হিন্দুস্থানী। এখন সেই হিন্দুস্থানীকে হিন্দিতে পরিণত করা দরকার, অথচ মহাত্মা মানুষের কথার খেলাফ কোন অবস্থাতেই হওয়া উচিত নহে। কাজেই হিন্দুস্থানীকে পূর্বের মত অবিকল রাখিয়া তাহার পূর্বে হিন্দীকে বিশেষণরূপে যোগ করিয়া দেয়া হইল। ইহাতে প্রতিশ্রুতিও বাঁচিল, হিন্দীও রক্ষা পাইল। সেই হইতে এই হিন্দী-হিন্দুস্থানী অর্থাৎ হিন্দীকেই মহাত্মাজী ও তাহার অনুচরেরা রাষ্ট্রভাষার সিংহাসনে বসাইবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন। তাঁহাদের মন এত মহান ও দৃষ্টি এত উদার যে, এই হিন্দীকেই তাহারা ভারতীয় জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির একমাত্র মহান বাহন বলিয়া ঘোষণা করিতেও বর্তমানে আর কোন প্রকার দ্বিধাবোধ করিতেছেন না। কিন্তু ভারতের মুসলমান সমাজ তাহাদের এই সব চেষ্টা ও যুক্তিবাদে একেবারে শিহরিয়া উঠিয়াছেন। কারণ তাহাদের মতে, হিন্দী ভাষা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বাহন, তাহাদের দৃষ্টিতে সেগুলি বিজাতীয়- মুসলমানদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আর কোন স্থানই তাহার মধ্যে নাই এবং সব চাইতে বড় কথা এই যে, তাহাদের মতে কোন প্রকার সামঞ্জস্যই বিদ্যমান নাই।
হীনতাবোধই (Inferiority Complex) ইহার বাধে
শ্রীযুক্ত সরকারের এই যুক্তিগুলো এবং তাহার মূলীভূত উদ্দেশ্যটা বাংলার হিন্দু-মুসলমান চিন্তানায়কদের বিশেষভাবে চিন্তা করিয়া দেখা উচিত। ভারতের হিন্দুস্থানীয় ধনকুবেররা যে কোন কারণে যে কোন উপায়ে হউক, বাংলায় সকল প্রকার শিল্প বাণিজ্যের উপর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করিয়া লইয়াছেন। তাহাদের দেশের কোন কর্মক্ষেত্রেই বাঙ্গালীর জীবনে হিন্দু হউক, আর মুসলমান হউক কোন প্রকার অধিকার নাই।
রাষ্ট্রভাষার আসনের উপর বাংলা ভাষার দাবী সম্বন্ধে আর একটা কথাও বিশেষভাবে জোর দিয়া বলা যাইতে পারে। রাষ্ট্রভাষার নির্বাচন লইয়া হিন্দী উর্দুর সমর্থকদের আজ যে তুমুল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়া গিয়াছে, তাহার ফলে হয়ত উর্দু ও হিন্দীর মধ্যে কোনটারই রাষ্ট্রভাষার আসন অধিকার করা সম্ভবপর হইবে না। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রাভাষারূপে আসন অধিকার করা সম্ভবপর হইবে না। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হইলে এই সাম্প্রদায়িক সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকা বহু পরিমাণে কমিয়া যাইতে পারে। কারণ মোছলেম ভারতের অন্তর্গত অংশ খাঁটি বাংলাভাষী। হিন্দী ও বাংলার মধ্যে প্রতিযোগিতা হইলে বাংলাকে সমর্থন করা তাহাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। (আজাদ, ২৩শে এপ্রিল ১৯৩৭/শুক্রবার ১০ই বৈশাখ ১৩৪৪)
উপরোক্ত ঘটনা প্রবাহ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পূর্বে অখণ্ড ভারতে কংগ্রেস নেতাদের হিন্দীকে একক রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা থেকে উর্দু সমর্থক মুসলমানদের মধ্যে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার মনোভাব গড়ে ওঠে। হিন্দীর পাল্টা দাবি হিসেবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার এ মানসিকতা দেশ বিভাগের প্রাক্কালে আরো প্রবল হতে থাকে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় সংহতির নামে পাকিস্তানে একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা এ মানসিকতারই ফসল।
আমরা আজ গর্বের সঙ্গে স্মরণ করতে পারি, লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পূর্বেও হিন্দী ও উর্দুর রাষ্ট্রভাষার আসন দখল করার এ তুমুল লড়াইয়ের প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের সচেতন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদগণ সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবিকে সোচ্চার করে তুলে ধরেছিলেন। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ সম্পাদিত আজাদের ১৯৩৭ সালের একটি সম্পাদকীয় তারই পরিচয় বহন করছে। ❐ (চলবে)
লেখক, গবেষক ও সংবাদকর্মী আইয়ুব হোসেনের জন্ম নওগাঁয়। তরুণবয়সে প্রগতিশীল ধারার রাজনীতর সঙ্গ যুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত থেকে একজন সাহসী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। সক্রিয় ও সার্বক্ষণিকভাবে রাজনীতিতে তৎপর থাকার কারণে একাধিকবার কারাগারে অন্তরীণ থেকেছেন। পরে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও সাম্য সমাজের স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর পেশা হিসেবে সংবাদপত্র, বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণার সংস্থা এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে সংবাদকর্মী হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি লেখালেখি ও সামাজিক গবেষণায়ও নিবিষ্ট।