‘আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে
মগজের কোষে কোষে যারা পুঁতেছিল
আমাদেরই আপন জনেরই লাশ দগ্ধ, রক্তাপ্লুত
যারা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু সেই সব পশুদের।’
‘অভিশাপ দিচ্ছি প্রত্যহ দিনের শেষে ওরা
হাঁটু মুড়ে এক টুকরো শুকনো রুটি চাইবে ব্যাকুল…’
মনে পড়ে শামসুর রাহমানের সেই কবিতা?
‘অভিশাপ দিচ্ছি এতোটুকু আশ্রয়ের জন্য,
বিশ্রামের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ওরা।
প্রেতায়িত সেই সব মুখের উপর
দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি কপাট,’
এই অভিশাপের সঙ্গে মিশে আছে ক্ষুধার তাড়না, আশ্রয়হীনতার যন্ত্রণা,অন্যায় হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের তীব্র ইচ্ছা। এ অভিশাপ পৃথিবীর প্রাচীনতম অভিশাপ।
এর শুরুর খোঁজ করতে থাকলে পিছু হাঁটতে হাঁটতে সেই বেদ-উপনিষদের সময়ে গিয়ে পড়তে হবে। খোঁজ করলে দেখা যাবে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য জুড়েই রয়েছে ‘অন্নের’ জন্য আকুলতা। অন্ন এখানে ‘খাদ্য’ এর প্রতিশব্দ বলা যায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলছে, ‘প্রথমে এখানে (এই বিশ্ব ভুবনে) কিছুই ছিল না, এ সব মৃত্যু দিয়ে আবৃত ছিল। ক্ষুধা দিয়ে,ক্ষুধাই মৃত্যু- ‘নৈবেহ কিঞ্চনাগ্র আসীন্মৃত্যু নৈবেদমাবৃতমাসীৎ। অশনায়য়াহশনায়া হি মৃত্যুঃ।’ (২:২:১)
ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলোকে মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়। দেবতার স্তব ও প্রার্থনা। আর এই প্রার্থনার মূল অংশটাই ছিল খাদ্যের জন্য প্রার্থনা। বোঝাই যাচ্ছে যে সে যুগে অন্নাভাব ছিল। খুব বেশি মাত্রাতেই ছিল।
বৈদিক ইতিহাস পড়লে জানা যায় আর্যরা আসার চার/পাঁচ শতাব্দির মধ্যেই উৎপাদন ব্যবস্থার কৌশলগত প্রকরণে বিপ্লব এসে যাওয়ায় উৎপাদনে বৃদ্ধি হতে শুরু হয়, উদ্বৃত্তও জমা হতে থাকে, বনভূমি পুড়িয়ে চাষের জমি বাড়ানো হয়। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আবার নতুন করে বাণিজ্য স¤পর্কও শুরু হয়। উদ্বৃত্ত ফসল ও কুটির শিল্প জাত পণ্যের বাণিজ্য দেশের ভেতরে-বাইরে বাড়ার ফলে সমাজের ওপরের দিকের কিছু মানুষের হাতে স¤পত্তি জমা হতে শুরু করে। ফলে নিচের তলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের ক্ষুধার অন্ন কোনোদিনই মেলে নি। অর্থাৎ সোজা কথায় ক্ষুধা ও খাদ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান ছিল। ফলে শঠতা, চুরি, ডাকাতি, খুন, গণিকাবৃত্তি কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। দুর্ভিক্ষেরও না। এমনকি আরণ্যক উপনিষদ যুগের পরে বৌদ্ধ যুগেও এই অবস্থানের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা?
‘দুর্ভিক্ষ শ্রাবস্তীপুরে যবে
জাগিয়া উঠিল হাহা রবে,
বুদ্ধ নিজ ভক্তগনে
শুধালেন জনে জনে
ক্ষুধিতের অন্নদান সেবা
তোমরা লইবে বলো কেবা।’
বস্তুত রাষ্ট্রে কোনো প্রতিকার ব্যবস্থা থাকলে বুদ্ধ তাঁর ভক্তদের নিশ্চয়ই এই দায়িত্ব নিতে বলতেন না!
ব্রাহ্মণ সাহিত্য (বৈদিক সাহিত্যের প্রধান দুটি ভাগ কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড । অর্থাৎ সংহিতা ও ব্রাহ্মণ এবং আরণ্যক ও উপনিষদ) রচনার সময়কাল থেকেই (মোটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব নবমের শেষ থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যে) জাতিভেদ প্রথা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা পায়। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পরে শেষ পংক্তিতে ছিলেন শূদ্র বা প্রান্তিক মানুষজনেরা। বাকি তিন বর্ণের মানুষদের সেবা করাই ছিল তাদের একমাত্র কাজ । এটাই তাদের বৃত্তি। সোজা কথায় দাসবৃত্তি বা দাসত্ব। দাসত্ব মানে প্রশ্নহীন আনুগত্য। প্রাচীন শাস্ত্রে নিয়ম অনুযায়ী দাসের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি থাকতে পারে না। বরং তাদেরকে প্রভুর সম্পত্তি বলে মনে করা হতো। যুদ্ধে বিজিত রাও দাসে পরিণত হতে থাকে। ঋগ্বেদের একটি শ্লোকে প্রার্থনা করা হয়েছে ‘সোম, আমাদের জন্য এবং দ্বিপদ ও চতুষ্পপদ পশুদের জন্য রোগশূন্য অন্ন দিন।’ এখানে দ্বিপদ পশুরা দাস ছাড়া আর কী হতে পারে! অর্থাৎ দাসদের এখন থেকে পশু সম্পদের মধ্যে ধরা হচ্ছে। কি ভয়ানক!
নারদ স্মৃতিতে পনের ধরনের দাসের কথা বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে গৃহজাত দাস, ক্রীতদাস, লব্ধ ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দাসের মুক্তি নেই। প্রভু মুক্তি না দিলে তাদের এই দাসত্ব বংশ পরম্পরায় চলত। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদীসহ বিরাট রাজার দাস হিসেবে এক বৎসর কাল কাটিয়েছিলেন। এই পর্বে দ্রৌপদীর ভূমিকা ছিল সৈরিন্ধ্রীর, যিনি রানী সুদেষ্ণাকে বলেছিলেন খাদ্যের পরিবর্তে তিনি কাজ করবেন। অর্থাৎ উদর দাস। অর্থশাস্ত্র ও মনুসংহিতায় এই উদর দাসদের সন্ধান পাওয়া যায়। অর্থাৎ এতটাই দারিদ্র ও অন্নাভাব যে দু’মুঠো খাবারের জন্য মানুষ দাসবৃত্তি বেছে নিচ্ছেন । অর্থাৎ আবার ঘুরে ফিরে সেই অন্নাভাব, সেই ক্ষুধা।
যুগ যুগ ধরে বঞ্চনা সহ্য করতে করতে শূদ্রদের মনোভাব সর্বদা প্রভুদের প্রতি যে অনুকূল ছিল না অর্থশাস্ত্র পাঠে তা জানা যায়। দাস বিদ্রোহের একটি উল্লেখও মেলে ‘বিনয় পিটক’ এ। তবে সেসব সম্ভবত বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিপরীতে শূদ্র, প্রান্তিক মানুষ বা দাসেদের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা সমকালীন সাহিত্য নাটকগুলোতে আকছার পাওয়া যায় এবং গণহত্যা। মহাভারতেই অন্তত দু’টি এমন গণহত্যার খবর পাচ্ছি আমরা।
জতুগৃহে ও খাণ্ডব প্রস্থে।
পাণ্ডবদের সরাতে চেয়েছিলেন দুর্যোধন। হস্তিনাপুর থেকে দূরে কোথাও, তারপর সেখান থেকে আরো দূরে, মানে সোজা কথায় পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে হস্তিনাপুর থেকে সেটা সম্ভব ছিল না, তাই বারণাবতে প্রমোদ ভ্রমণের অছিলায় পাঠানো হলো তাদের। ধৃতরাষ্ট্রের আগ্রহ ছিল বেশি। কাজেই পা-বরা যেতে বাধ্য হলেন। যাত্রার পূর্বে বিদুর ম্লেচ্ছভাষায় (যে ভাষা শুধু যুধিষ্ঠির বুঝতেন) সংকেতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বারণাবতে পা-বদের আগুনে পুড়িয়ে মারার তোড়জোড় চলছে। যুধিষ্ঠির যেন সাবধান থাকেন এবং সমস্ত পথঘাট যেন ভালো করে চিনে রাখেন। এই উপদেশ শিরোধার্য করে যুধিষ্ঠির প্রস্তুত হয়েছিলেন প্রথমদিন থেকেই।
মহাভারতে বারণাবতের জতুগৃহটির নাম ছিল ‘শিবভবন’। দুর্যোধনের বিশ্বস্ত পুরোচন ঘি, চর্বি, গালা ইত্যাদি দাহ্য পদার্থ দিয়ে নিপুণভাবে বাড়িটি তৈরি করান। একটানা ছয় মাস পাণ্ডবরা এই গৃহে বাস করেন। বিদুরের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাতে পুরোচন এই গৃহে আগুন লাগাবেন। অর্থাৎ তাদের হাতে অনেকটা সময় ছিল। এই সময়টা যুধিষ্ঠির একটি নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনা করেন।
পুরোচন যেন ঘুণাক্ষরেও না বোঝেন সেইভাবে বিদুরেরই এক বিশ্বাসী খনকের সাহায্যে বাড়ির তলায় মাটি কেটে সুরঙ্গ তৈরি করেন আর নির্দিষ্ট রাতে কুন্তী এক ব্রাহ্মণ ভোজনের আয়োজন করেন। পুরুষ এবং নারীরা আসেন। যথেচ্ছ পানভোজনের পর সকলে ফিরেও যান। শুধুমাত্র এক নিষাদী ও তার পাঁচ ছেলে ফিরে যেতে পারেন নি। অতিরিক্ত মদ্যপানে তারা মৃতবৎ অচেতন হয়ে পড়েন। পুরোচনও শুয়ে পড়েছিলেন। সেই রাতেই ভীম সমস্ত বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেন এবং খুঁড়ে রাখা সুরঙ্গপথে পাণ্ডবরা কুন্তীসহ নিরাপদে বনের অন্য প্রান্তে পৌঁছে যান।
মহাভারতকার বলেছেন, সেই রাতে ওই নিষাদী এবং তার পাঁচ ছেলে ‘কাল প্রেরিত’ হয়ে সেখানে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু ব্যাপারটা অতটাও সহজ ছিল না। এর পেছনে সুপরিকল্পিত যোগাযোগের চিহ্ন রয়েছে। রাজনীতির বলি হয়েছিল নিুবর্গের এই ছ’টি প্রাণ। এবং তাই নিয়ে মহাভারতকার কোথাও একবারের জন্যও পা-বদের কোনো কটু বাক্য শোনান নি। কারণ প্রাণ গিয়েছিল নিম্নবর্গের মানুষদের।
বস্তুত নিষাদ পরিবারের মৃত্যুর বিনিময়ে দুর্যোধনকে ধন্ধে রাখার এ ছিল এক নিখুঁত পরিকল্পনা। না হলে জাতপাতের সেই কঠোরতার দিনে ব্রাহ্মণদের নৈশভোজে নিষাদ গোষ্ঠীর মানুষরা ঢুকে পড়েন কি করে! তারা এক পংক্তিতে ভোজনই বা করেন কি করে! অতিরিক্ত মদ্যপানে বেঁহুশ হয়েছিলেন তারা। তার অর্থ তাদের অবিরত মদ্য সরবরাহ করা হয়েছিল। আর নৈশভোজই বা কেন? এটা তো দ্বিপ্রহরেও হতে পারত? সবশেষে ছয় জন মানুষ অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইলেন আর কেউ তা খেয়াল করল না? আসলে পা-বদের ছয়টি শরীরের দগ্ধাবশেষের প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজন মেটাতে নিম্নবর্গের এই মানুষগুলোকে হত্যা করা হলো। হয়ত নিম্নবর্গের বলেই তাদের মনে হয়েছিল এই হত্যায় কোনো অধর্ম নেই!
মহাভারতের দ্বিতীয় গণহত্যা ছিল খাণ্ডবদহন। রাজনৈতিক ইতিহাসে শাসক বনাম অরণ্যবাসীদের বিবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সম্পপদ ছাড়াও সামরিক প্রয়োজনেও অরণ্যের ওপরে রাষ্ট্র সর্বদাই নিরঙ্কুশ অধিকার চেয়েছে। আজও পর্যন্ত বনবাসীদের সঙ্গে এই সংঘাত কিন্তু শেষ হয় নি।
ইন্দ্রপ্রস্থের অনতিদূরে খাণ্ডব বনের এই অরণ্য পশুপক্ষী ছাড়াও স্মরণাতীত কাল থেকে বহু আদিবাসী গোষ্ঠীর বাসভূমি ছিল। অসুর, গন্ধর্ব, যক্ষ, নাগ, রাক্ষস গোষ্ঠী ছিল খাণ্ডব বনের স্থায়ী বাসিন্দা।
মহাভারতের আখ্যায়িকার খা-বদাহনের কাহিনী ছিল নিম্নরূপ:
যুধিষ্ঠির তখন ইন্দ্রপ্রস্থে রাজত্ব করছেন। নবীন রাজ্য। শাসন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে একটা সুশৃঙ্খল রূপ নিচ্ছে। নগরায়ন হচ্ছে মৃদু গতিতে। সেই সময় একবার যমুনার তীরে পাণ্ডবরা কৃষ্ণের সঙ্গে অবসর যাপন করতে এসেছিলেন। খাদ্য পানীয়, সঙ্গীত নৃত্য, হাস্য-পরিহাসে তারা যখন দিন কাটাচ্ছিলেন সেই সময় একদিন ব্রাহ্মণের বেশে অগ্নি এসে উপস্থিত হলেন কৃষ্ণার্জুনের সামনে। তিনি বললেন যজ্ঞের ঘি খেয়ে খেয়ে অগ্নিমান্দ্য হয়েছে তাঁর। একমাত্র কৃষ্ণার্জুনই তাঁকে সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারেন। বিরাট খাণ্ডব বন পুড়িয়ে ছারখার করে দিলে ঘিয়ের বদলে গাছপালা পশুপাখি আহার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন তিনি। কিন্তু কৃষ্ণ অর্জুনের কাছে সেই মুহূর্তে উপযুক্ত অস্ত্র ছিল না। অতএব অস্ত্র চুক্তি হলো উভয়পক্ষের। অগ্নি তাঁর মিত্র বরুণের কাছ থেকে অর্জুনকে এনে দিলেন গাণ্ডীব ধনু, অক্ষয় তুনীর, কপিধ্বজ রথ। কৃষ্ণ পেলেন সুদর্শন চক্র এবং কৌমোদকী গদা।
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বন পোড়ানোর জন্য এত অস্ত্রের প্রয়োজন হবে কেন! তার মানে তাঁরা জানতেন খাণ্ডবদহন করলে তাঁদের অনেক বড় প্রতিরোধের সামনে পড়তে হবে। আরও একটা বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ব্রাহ্মণবেশী অগ্নি ও ক্ষত্রিয় কৃষ্ণার্জুন এখানে যৌথভাবে অনার্য পীড়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। উচ্চবর্ণের স্বার্থ-জোট অনার্য অন্ত্যজদের যেভাবে যুগের পর যুগ ধরে পেষণ করছে এ যেন তারই একটা রূপ।
অতএব খাণ্ডব বনে আগুন লাগানো হলো। আকাশ ভেদ করে উঠলো অগ্নির লেলিহান শিখা। বনের দুদিক আগলে রইলেন কৃষ্ণ-অর্জুন। কাউকে পালাতে দিলেন না- বনচররা হয় আগুনে দগ্ধ হলো নয়ত কৃষ্ণার্জুনের অস্ত্রে মারা পড়ল। এমনকি যেসব পাখিরা উড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল অর্জুনের প্রখর বান তাদের বিদ্ধ করতে দু’বার ভাবে নি – আর বনবাসী মানুষেরা! কারোর শরীর দগ্ধ হলো, কেউ হলো অর্ধদগ্ধ। গায়ে আগুন নিয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল প্রাণীরা – রক্ত- মেদ -মজ্জায় পরিপূর্ণ হলো বনভূমি। কিন্তু এইবার যুধিষ্ঠিরের নতুন রাজ্যে নগরায়ন দ্রুততর হবে। এই দহন পর্বের শেষে দু’জন মাত্র জীবিত ছিলেন। প্রথম জন নাগরাজ তক্ষ্ক পুত্র অশ্বসেন। ইনি পালিয়ে গিয়ে বেঁচেছিলেন। আর দ্বিতীয় জন ময়াসুর। অর্জুন তাঁর প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছিলেন। কারণ যুধিষ্ঠিরের জন্য তুলনাহীন রাজসভা গড়ে তুলতে তাঁকে তাঁদের প্রয়োজন ছিল।
এই দাহন পর্বে রূপকে যে সত্য আবৃত হয়েছে তাকি প্রকৃত অর্থে গণহত্যা নয়?
ইতিহাস কি আসলে বদলায় না? যুগে যুগে, সেকাল থেকে একালে অপরিবর্তনীয়ই থেকে যায়? বহিরঙ্গে বদলায় শুধু, অন্তরঙ্গে একই থেকে যায় -এটাই বোধহয় মানবজীবনের চিরন্তন ট্রাজেডি –
গ্রন্থ ঋণ:
মহাভারতের সমাজ – শ্রী সুখময় ভট্টাচার্য্য
বেদে ক্ষুধা প্রসঙ্গ – সুকুমারী ভট্টাচার্য
লেখক: কলামিস্ট, পশ্চিমবঙ্গ