ছয় দফা ঘোষণার পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ-এর পূর্ব পাকিস্তান প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি এই যে ৬ দফা দিলেন তার মূল কথাটি কী?’
আঞ্চলিক ভাষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন শেখ মুজিব, ‘আরে মিয়া বুঝলা না, দফা তো একটাই । একটু ঘুরাইয়া কইলাম ।’
ঘুরিয়ে বলা এই এক দফা হলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্থাৎ স্বাধীনতা ।
ছয় দফার জন্মের পেছনে মূল কারণ ছিল মূলত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বৈষম্য। ছয় দফার দাবিগুলোতে স্বাধীনতার কোনো কথা লেখা ছিল না। সেখানে ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়নের সুপারিশ। এবং স্বায়ত্তশাসনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা পথ-নির্দেশ । এটা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কৌশল ।
যুদ্ধের পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয় । এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা উনিশ শ’ ছেষট্টি সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি জাতীয় সম্মেলন ডেকেছিল ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ওই সম্মেলনে যান বঙ্গবন্ধু আগের দিন সম্মেলনের বিষয় নির্ধারণী কমিটির সভায় ছয় দফা পেশ করেন । এই ছয় দফা কে তৈরি করেছিলেন সেটি ইতিহাসে স্পষ্ট নয়। ছয় দফার ছিল তিনটি স্বতন্ত্র দিক— রাষ্ট্রের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কাঠামো।
ঐতিহাসিক ৬ দফা হলো:
১. পাকিস্তান একটি দফা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফেডারেশন হিসেবে গঠিত হবে
২. ফেডারেল সরকারের এখতিয়ারে থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র । অন্যান্য বিষয় প্রদেশগুলোর হাতে থাকবে ।
৩. প্রতিটি প্রদেশের জন্য পৃথক তবে অবাধে রূপাস্তরযোগ্য মুদ্রা থাকবে । যদি একক মুদ্রা হয় তাহলে মুদ্রা হস্তান্তর রোধ করার উপায় থাকতে হবে ।
৪. রাজস্ব থাকবে প্রদেশের হাতে।
৫. প্রতিটি প্রদেশের মুদ্রা আয়ের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে ।
৬. আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিটি প্রদেশকে মিলিশিয়া রাখার অনুমতি দিতে হবে ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ছবি : বিপ্লব দত্তর আঁকা পোর্ট্রেট
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।