স্বাধীনতার অর্ধ শতকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও বাংলাদেশ ‘স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ’ বিষয়ক একটি অনভিপ্রেত আলোচনার ঘূর্ণাবর্তে আবর্তিত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে, আড়ালে-প্রকাশ্যে, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা থেকে শুরু করে বিজ্ঞজনসহ আমজনতা, সবাই এই আলোচনায় শামিল হচ্ছেন। আপাতদৃষ্টে প্রসঙ্গটি সাদামাটা মনে হলেও এর প্রকৃতি, ব্যাপ্তি এবং গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকের ধারণাই তেমন পরিষ্কার নয়। এরপরও এই নিয়ে বিতর্ক এবং বাড়াবাড়ির কমতি নেই, বরং তার পরিধি এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। সেই সাথে, কথিত ‘পক্ষ-বিপক্ষ’ সংক্রান্ত আলোচনা সমালোচনা এবং আক্রমণ প্রতিআক্রমণের শঙ্কায়, উৎকণ্ঠায় মুহুর্মুহু আন্দোলিত হয়ে উঠছে একাত্তরের ঐক্যবদ্ধ জাতি, নিমজ্জিত হচ্ছে এক অস্থির বিভাজন সঙ্কটে।
এই বিতর্ক সঙ্গত কারণেই আমাদের জাতীয় সংহতি এবং স্বার্থের পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে এই বিতর্কের সূচনা হলেও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ দেশের আপামর মানুষের দেশপ্রেম, স্বার্থান্বেষী মহলের কীর্তিকলাপ এবং বিদেশীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বাড়াবাড়ি, আড়াআড়ি কিংবা মুখাপেক্ষী হওয়ার মতো বিষয়গুলোও।
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছেই অত্যন্ত প্রিয় এবং পবিত্র দুটি শব্দ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। স্বাধীনতা আমাদের স্বকীয়তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার জন্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন তাঁরা হাতেগোনা কতিপয় রাজাকার আলবদর ছাড়া দেশের সকল সাধারণ মানুষের সমর্থন এবং আশীর্বাদ নিয়েই লড়েছেন। যাঁরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি কিংবা করার সুযোগ পান নি, তাঁরাও মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য কামনা করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের সাহস ও উৎসাহ জুগিয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ে রণাঙ্গন ও রণাঙ্গনের বাইরে সাধ্যানুসারে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা এবং অকুণ্ঠ সমর্থন ও প্রেরণাকে বুকে ধারণ করেই আমাদের অকুতোভয়, বীর মুক্তিযোদ্ধারা চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। আমি মনে করি, আজও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনা সবার হৃদয়ে একইভাবে জাগরূক ও অম্লান।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? স্বাধীনতার শুরু থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ফসল নানাভাবে ভোগ করে আসছেন। তবে সবাই এই ফসলের সমান অংশীদার নন। কেউ একটু বেশি, কেউ কম, আর কেউবা শুধুমাত্র মুক্ত নিঃশ্বাস ফেলার অধিকারটুকু ছাড়া তেমন কিছুই পান নি এই স্বাধীন বাংলাদেশে। যাঁরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে নিজেদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার ফসল ঘরে তুলে এনেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এখনও চরমভাবে অবহেলিত। অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আজও অহেতুক প্রশ্ন এবং বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন, আবার মুক্তিযুদ্ধ করেন নি এমন অনেক ভণ্ড প্রতারক মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা অনায়াসে হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্বাধীনতার ফেরি করে ফেরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে জীবিকার তাগিদে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বেড়াচ্ছেন। এঁদের অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ কিংবা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে নীরবে চলে গেছেন এই মায়াহীন পৃথিবীর মোহ কাটিয়ে অনেক দূরে।
দেশের এই সব কালজয়ী সন্তানেরা, আর যাঁরা শক্তি, সাহস আর সমর্থন দিয়ে এঁদেরক জুগিয়েছেন অনুপ্রেরণা, আজ যদি ক্ষোভ আর কষ্টের আতিশয্যে এঁদের কারও মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে, ‘কি চেয়েছি আর কি পেলাম এই স্বাধীন বাংলাদেশে?’ কিংবা ‘কেন এই স্বাধীনতা?’, আমরা কি ধরে নেব, এঁরা সব স্বাধীনতার বিপক্ষের কিংবা পরাধীনতার পক্ষের শক্তি? আমি তা মনে করি না। বাংলায় ‘অভিমান’ বলে একটি কথা তো আছে। বুকে কষ্ট জমা হলে অভিমান তো হতেই পারে। আর ভালোবাসার তীব্রতা ও গভীরতাটুকু না বুঝলে অভিমানের ভাষা কিংবা কষ্টটুকুও বোঝা দায়। এ প্রসঙ্গে কোনো কিছু না ভেবেচিন্তে হুট করে কেউ যদি এঁদের নিখাদ দেশপ্রেম ও ভালোবাসার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন, তাহলে কিইবা বলার থাকে?
তবে এটাও ঠিক, আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক সুযোগসন্ধানী দুরাত্মা যারা দেশের চাইতে নিজেদেরকে বেশি ভালোবাসে, এবং দেশের স্বার্থ নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দিতে পারে আত্মস্বার্থের বিনিময়ে। এদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও এইসব মীরজাফর, জগত শেঠ, রায় দুর্লভদের বিচরণ এখন প্রায় অবাধ, যত্রতত্র এবং বেপরোয়া। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মীরজাফর আর তার দোসরেরা সিরাজেরই সুখ-দুঃখের সাথী ছিল! সিরাজ তাদের চিনতে পারেন নি। আর ক্লাইভের পা-চাটা বাদবাকি দেশী কুকুরদের কথা নাইবা বললাম।
বাংলাদেশে এই দুরাচাররা ইতোমধ্যেই সৃষ্টি করেছে শক্তিশালী এবং প্রায় অপ্রতিরোধ্য এক প্রভাব বলয়ের। বিভাজন এদের অস্ত্র। এদের অবস্থান এবং আনাগোনা সর্বত্র। তবে, এইসব অঘটনঘটনপটীয়সীদের চেনা বড় মুশকিল। এরা ছদ্মবেশী প্রবঞ্চক, এরা ভোল বদলাতে সময় নেয় না। কোনো দল কিংবা মতের প্রতি এরা বিশ্বস্ত নয়। তবে দলীয় খোলসে নিজেদেরকে আড়াল করার কৌশল এদের ভালোই জানা আছে। এরা সুযোগ সন্ধানী- মীরজাফরের মতো আত্মস্বার্থে নিজের দল কিংবা দলনেতার বারোটা বাজাতেও এরা পিছপা হয় না। ক্ষমতার পালাবদলে দলবদল এইসব আত্মসর্বস্ব দুরাচারের কাছে নিতান্তই মামুলী বিষয়। এরা জনসমক্ষে অকুতোভয় দেশপ্রেমিক, জনদরদী; আর পেছনে দেশ এবং দশের স্বার্থ বিক্রির জন্য থাকে সদাপ্রস্তুত।
আমাদের ‘সুশীল’ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অনেকের ভূমিকাও একইভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আহমদ ছফার ভাষায়, এই শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা ‘ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী’ ভিন্ন অন্য কিছু নয়! এরা বিশেষ দল ও মতকে সমর্থনের বিনিময়ে সুবিধা হাতিয়ে নেয়, পরজীবী জীবনযাপন করে আয়েশে সময় কাটায় এবং বিভাজনকে উসকানি দেয় বিনা দ্বিধায়।
মীরজাফরের ষড়যন্ত্র এবং লর্ড ক্লাইভের ছলচাতুরীর মাধ্যমে ভারতবর্ষে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার পর ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ বা বিভাজন এবং শাসন নীতিমালাকে পুঁজি করে ইংরেজরা দুইশ’ বছর ধরে ভারত শাসন এবং শোষণ করে গেছে। তাদের স্বার্থ হাসিল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই বিভাজন ছিল এক জরুরি পূর্বশর্ত। ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতিমালা দিয়ে ইংরেজরা ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই শুধু বিনষ্ট করে নি, এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন, ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী এবং অঞ্চলের মধ্যে বপন করে গেছে পারস্পরিক ঘৃণা ও সন্দেহের বিষাক্ত বীজ। এই সন্দেহ বাংলাকে এক থাকতে দেয় নি এবং ভারতকে করেছে দ্বিধাবিভক্ত। এই বিভাজনের কারণে সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দ একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা হারিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হতে পারেন নি এবং তথাকথিত সমঝোতার জন্য তাঁদেরকে প্রতিনিয়ত মুখাপেক্ষী হতে হয়েছে ইংরেজদেরই কাছে। কূটচালে পরাভূত ভারতবাসীদের যেন আর কিছুই করার ছিল না। তাই, অবাস্তব এবং অসম কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে রেডক্লিফের মনগড়া ভারত বিভাগকে মেনে নিতে হয়েছে দ্বিধাবিভক্ত সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দকে।
এখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের এই বিভাজন কার স্বার্থে? যাঁরা এই বিভাজন নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন কিংবা বিনা বাক্য ব্যয়ে তা সমর্থন করছেন এবং ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এই বিভাজনের সুদূরপ্রসারী পরিণাম কি হতে পারে? অপরিমিত ভৌগলিক ভূখণ্ড ও সীমিত সম্পদ সমৃদ্ধ আঠারো কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে আমরা বিভাজনের সীমারেখা টানবো কোথায়?
এমনিতেই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে পরস্পরের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত। নতুন করে এই বিভাজন এদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও বেশি জটিল এবং বিরোধপূর্ণ করে তুলছে। এমন কি ‘অতি জরুরি’ কিংবা ‘রাষ্ট্রীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে’ একে অপরের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতেও এদের অসম্মতি! অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমস্যার সমাধানের জন্য এদের অনেকেই আজকাল তীর্থের কাকের মতো বহির্দেশীয় সরকার, রাজনীতিবিদ, গোষ্ঠী কিংবা সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকেন – কৃপাপ্রার্থী হন! অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমরা আমাদের সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে সক্ষম নই। বিদেশীদের দখলমুক্ত হয়েও আমরা আজও যেন তাদের কাছেই পণবন্দি। তাই আমরা বিদেশীদের কাছেই ফিরে যাই বারবার- তাদের কাছে ধর্না দেই, নির্লজ্জের মতো তাদের মুখাপেক্ষী হই নির্বিকার! ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয় – কষ্ট হয় আর মাথা নুয়ে আসে লজ্জায়।
যাই হোক, ইংরেজদের কবল থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ধর্মভিত্তিক কিংবা গোষ্ঠীভিত্তিক ছিল না। এই আন্দোলন ছিল আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা রক্ষার আন্দোলন, এই আন্দোলন ছিল তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়ন আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা আপামর মানুষের বাঁচা-মরার আন্দোলন। মুক্তিপাগল মানুষ প্রাণপণ যুদ্ধ করেছে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, এক এবং অভিন্ন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য- বিভাজিত কোনো অস্তিত্বের জন্যে নয়। চরম মুল্যের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের প্রিয় এই স্বাধীনতা তাই উৎস, উদ্দেশ্য এবং শাসনতান্ত্রিক ভাবেই সকল বিভাজনের ঊর্ধ্বে।
তবে, মতপার্থক্য অথবা ভিন্নমত তো থাকতেই পারে। তাই বলে পরস্পরের সমালোচনা করা যাবে না কিংবা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে একেবারেই সহ্য করতে পারবে না – তা কি করে হয়? নানা বৈপরীত্য, প্রতিকূলতা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে একতাবদ্ধ (ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি) হয়ে আমরা দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যুগ যুগান্তর পার করেছি মিলেমিশে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। এর মধ্যেও ভিন্নতা এবং ভিন্নমত ছিল, সাথে ছিল পরমতসহিষ্ণুতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। সাময়িক তিক্ততারও সৃষ্টি হয়েছে সময়ে সময়ে যার সুরাহাও হয়েছে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। দৃষ্টি ও মতের ভিন্নতা এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই বলে অসংযত, বিভ্রান্তিকর এবং বিপজ্জনক এই বিভাজনকে সচেতনভাবে জিইয়ে রাখা কতটা সমীচীন? আমরা কি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিভাজনের অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারি না?
এছাড়া, কেউ যদি সরাসরি দেশের স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েই থাকে কিংবা এ বিষয়ে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুসারে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ প্রণয়নসহ যথাযথ শাস্তি প্রদানের সুযোগ তো রয়েছেই। তাই, শুধুমাত্র রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে দেশের জনসংখ্যার বিপুল একটি অংশকে ঢালাওভাবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি কিংবা বিশেষ কোনো দেশের চর বা দালাল বলে আখ্যায়িত করা নিতান্তই স্থূলতা এবং অপরিণামদর্শিতারই পরিচায়ক।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তাই সকল রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দের কাছে বিনীত আহ্বান— বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করুন, প্রয়োজনে আলোচনার টেবিলে বসুন; দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি শুধরে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠুন। মীর জাফরদের পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে সম্মিলিতভাবে এই সব ষড়যন্ত্রকারী এবং এদের কূটবুদ্ধিসম্পন্ন মন্ত্রকদের চিহ্নিত করুন। এরা দেশ এবং জনগণের শত্রু। এদের মুখোশ উন্মচিত করুন, এদের অন্যায় আচরণকে প্রতিহত করুন এবং প্রয়োজনে এদেরকে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।
‘বাংলাদেশ’ আঠারো কোটি মানুষের একটি বিশাল পরিবারিক বন্ধনের নাম। বিভাজন এবং এতদ্সৃষ্ট অন্তর্কলহ এই বন্ধনকে করে তুলছে শিথিল ও প্রশ্নবিদ্ধ যা জন্ম দিচ্ছে অপ্রত্যাশিত সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জটিলতার। আর এই বিভাজনকে পুঁজি করে নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিলের উৎসবে মেতে উঠেছে কতিপয় কূটবুদ্ধিসম্পন্ন আত্মসর্বস্ব দুর্বৃত্তের দল।
অনেকেই মনে করেন, এই অনভিপ্রেত বিভাজন দেশের আপামর মানুষকে টেনে নিয়ে যেতে পারে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং ভয়াবহ পরিণতির দিকে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের কাছে তাই আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ – আসুন আমরা সবাই সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে দেশকে ভালোবাসি, লাল-সবুজের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার অভিন্ন আদর্শ ও উদ্দেশ্যে আস্থাশীল হয়ে বিভাজনকে ‘না’ বলি সুতীব্র ভাষায়।
মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে