তালেবানরা আফগানিস্তান দখল করে নেওয়ার পর রাজধানী কাবুলের রাস্তায় রাস্তায় চলেছে তালেবান সদস্যদের সশস্র মহড়া। আফগান সেনাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ট্যাংক-সাঁজোয়া যানগুলো নিয়ে শহরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল তালেবান সদস্যরা। তালেবানের হাতে পড়া এসব যুদ্ধাস্ত্র আফগান সেনারা পেয়েছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে। শুধু যুদ্ধাস্ত্রই নয়, গত ২১ বছরে নানান খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। ফোর্বস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবান হটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খরচ ছাড়িয়ে গেছে জেফ বেজোস, ইলন মাস্ক, বিল গেটসসহ বিশ্বের শীর্ষ ৩০ ধনকুবের মোট সম্পদের পরিমাণকেও।
খরচের হিসাবটা শুরু ২০০১ সাল থেকে। সে বছরে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। এরপর থেকেই আফগানিস্তানে খরচ করে গেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে খরচের অংকটা বিশাল। মাথাপিছু হিসাবে প্রত্যেক আফগান নাগরিকের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার ডলার। আফগানিস্তানে প্রায় চার কোটি মানুষ বসবাস করে। একই হিসাবে আফগানিস্তানে মার্কিনদের প্রতিদিন খরচ হয়েছে ৩০ কোটি ডলারের বেশি।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় এক হিসেবে জানিয়েছে, আফগানিস্তান অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যুদ্ধের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৮০০ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতে খরচ হয়েছে ৮৫ বিলিয়ন ডলার। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমেরিকানদের করের অর্থে দেওয়া হয়েছে তাদের বেতনও। প্রতি বছর আফগান সেনাদের বেতন দিতে খরচ হয়েছে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার।
তবে দুই দশকের সংঘাতে খরচের এই হিসেব প্রাণহানির কাছে একেবারেই তুচ্ছ। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফগান যুদ্ধে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা। এছাড়া একই সময়ে আফগানিস্তানে মারা গেছেন প্রায় চার হাজার মার্কিন নাগরিক। যুদ্ধে ২০০১ থেকে ৬৯ হাজার আফগান সেনাসদস্য এবং ৪৭ হাজার বেসামরিক আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে নানা সংঘাতে বিপক্ষের ৫১ হাজার সদস্য নিহত হয়েছেন।
এ তো গেল শুধু নিহতের হিসাব। আফগান যুদ্ধের ফসল আরও ২০ হাজার আহত মার্কিন সেনা। তাদের সহায়তা করতে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০০ বিলিয়ন ডলার। এ সহায়তা অব্যাহত রাখতে হলে আগামিতে আরও আধা ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
অন্যদিকে আমেরিকান সরকার আফগানিস্তান যুদ্ধ শেষ ঘোষণা করলেও এর খরচের বোঝাটা বহুদিন বয়ে চলতে হবে। গবেষকেরা বলছেন, ২০ বছর ধরে যুদ্ধটা চালানো হয়েছে ধার করা অর্থে। এর ৫০০ বিলিয়ন ডলার সুদ এর মধ্যেই পরিশোধ করতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ সুদের পরিমাণ দাঁড়াবে সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার। মানে হলো, আফগান যুদ্ধের দায়ে প্রত্যেক আমেরিকানদের ঘাড়ে ২০ হাজার ডলার ঋণের বোঝা পড়তে যাচ্ছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার পর আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে আফগানিস্তানে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী। এরপর দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং পরে তাদের সহায়তায় গড়ে ওঠা আফগান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের যুদ্ধ চলে আসছিল।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস ও বিবিসি অবলম্বনে।
লেখক: শিক্ষার্থী।