৩ জানুয়ারি। রাত ৮ টা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ‘বেগম সিরাজুন্নেসা’ হলের ক’টি জরুরি সমস্যা নিয়ে রিডিং রুমে আলোচনায় বসলেন কয়েকজন। আলোচনার বিষয় ছাত্রীদের হলটির সমস্যা। প্রধান সমস্যাগুলো হলো-সবার থাকার সিট নেই, খাবারের মান ভালো নয়, ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা আছে, রয়েছে পানীয়জলের অভাব ইত্যাদি। আলাপ শেষে প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজাকে ফোন করলেন একজন। সমস্যাগুলো বলতে শুরু করলেন। সমস্যা নিজের চোখে দেখে যেতে ম্যাডামকে হলে আসতে অনুরোধ করলেন। তিনি আসলেন না। ছাত্রীদের অভিযোগ তিনি আসলেন তো না, উল্টো ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেন। মন খারাপ হলো তাদের। মানবিক সমস্যাগুলোর সমাধান না করা ও খারাপ ব্যবহার করায় সৃষ্ট ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটল। তারা ছুটলেন স্বায়ত্বশাসিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্তাব্যক্তি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কাছে। নিশ্চয়ই একটা সমাধান মিলবে। সেদিনই রাত ১১ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত তীব্র শীত উপেক্ষা কয়েকশ’ ছাত্রী বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন ভিসির বাসভবনের সামনে। ভিসি আশ্বস্ত করলেন পরদিন মিটিংয়ে বিস্তারিত জেনে সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে গভীর রাতে ছাত্রীরা ফিরলেন।
পরদিনের সভায় সমাধান এল না। আবারও বিক্ষোভ শুরু হলো। মানবিক সমস্যা সমাধানের দাবি পৌঁছল প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগের দাবিতে। শক্তিপ্রয়োগ করে আন্দোলন দাবানোর অপচেষ্টা হলো। আর এই শক্তিপ্রয়োগের অপবাদে যুক্ত হলো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নাম। এই নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। তিনদিন পর থেকে আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। এ ঘটনার পর এই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে অনড় থাকে।
১৯ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ ও ৩০০ আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক ও দেশের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। এর মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলে আন্দোলন থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহবান জানান। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টা সফল হয় নি।
টানা ১৪ দিন আন্দোলনে উত্তাল থাকার পর ২৫ জানুয়ারি প্রাণভোমরা হয়ে ভোর ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছালেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক। দু’জনেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক। অবসরে গিয়েছেন। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাত ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোর যাত্রা। টানা ২৫টি বছর শিক্ষকতা, গবেষণা করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের নানা কাজ, আবিষ্কার, উদ্যোগে প্রেরণা হয়ে থেকেছেন।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হবে- এই আশ্বাসে, প্রিয় শিক্ষকদের কথাতেই অনশন ভাঙতে রাজি হলেন তারা। তাদের হাতে পানি খেয়ে টানা ১শ’ ৬৩ ঘণ্টা বা ছয় দিন ৭৯ মিনিট পর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙালেন জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক। শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করে অনশন ভাঙলেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চলবে।
এরপর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক। তাদের বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক কিছু উঠে আসে, অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যায়। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। আমি অনশন ও আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখি। ক্যা¤পাসে ফিরে আসার বিষয়ে আমার উদ্দেশ্য ছিল, এতগুলো মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। সেটি করতে দেওয়া যাবে না। আমি সেটি চাই নি। ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করবে কি না তাদের ব্যাপার কিন্তু আমার মতে, তাদের আন্দোলন যৌক্তিক।’
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘ওরা তাদের কথা রেখেছে। আমি খুবই গর্বিত যে, আমি তাদের অনশন ভাঙাতে পেরেছি। আমি ছেলেমেয়েদের ওপর সন্তুষ্ট। তারা আমার কথা রেখেছে। অনশন ভেঙেছে। তবে একটা মানুষের জন্য এত মানুষের জীবন নষ্ট করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের টং দোকান বন্ধ করে দেওয়া, কনসার্ট, অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, রাস্তা পেইন্টিং নিষিদ্ধ করে দেওয়া, মুক্তবুদ্ধি চর্চা বন্ধ করে দেওয়াকে ক্যা¤পাসে তালেবানি শাসন বলে অভিহিত করেএকজন অভিভাবক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাফর ইকবাল বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো থাকতে হবে। যখন থেকে বন্ধ হয়ে গেছে, তখন থেকেই বুঝতে হবে-আর যাই হোক এই উপাচার্য মহোদয় একাডেমি বোঝেন না, শিক্ষা বোঝেন না, ছাত্রছাত্রীদেরও বুঝতে পারেন না।’
তিনি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার সময় ভিসি স্যারকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এ ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলোও না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু চালানো যাবে না। গত তিন বছরে এই চিঠি খুলে দেখার কারো সময় হয়েছে বলে মনে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিন বছর আগে অবসরে যাওয়ার সময় উপাচার্য মহোদয়কে আমার ওই চিঠিতে আরো বলেছিলাম, ছাত্রছাত্রীদের কখনো অবহেলা করবেন না, তাহলে ওদের ভেতরে যেসব ক্ষোভ আছে, সেগুলো বিক্ষোভে রূপ নেবে। অক্ষরে, অক্ষরে আমার কথা ফলেছে। আমি তো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনি। আজকের এ আন্দোলন আসলে গত তিন বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ।’
তিনি উপাচার্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও প্রচ্ছন্ন সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে, একেবারেই সাধারণ ছেলেমেয়ে। সঙ্গত কারণেই ওরা আন্দোলন করছে। পুলিশ তাদের উপর হামলা করেছে, তাই পরেও তারা আন্দোলনটি করছে। তাদের এসব দাবি যৌক্তিক। ছাত্রদের উপর এ বর্বর হামলা খুবই খারাপ উদাহরণ। অন্যায় ও ববরতা। তাদের উপর যখন পুলিশ হামলা চালিয়েছিল, তখন শিক্ষকদের সবার উচিত ছিল-ছাত্রছাত্রীদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া; তারা সেটি করতে পারেন নি। শিক্ষকদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করি।
আন্দোলন করে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করায় পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীকে ঢাকা থেকে সিআইডি গ্রেপ্তার করার ব্যাপারেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারীদের তিনি নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে বলেছেন, ‘আজকে ওদের টাকা দিয়ে সাহায্য করায় পুলিশ আটক করেছে; আমি ছাত্রছাত্রীদের টাকা দিলাম। আমাকেও গ্রেফতার করা হোক।’
আথিক সাহায্যদাতাদের খবর ক্যা¤পাসে দিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তাদেরকে কোর্টে ওঠানো হবে ও জামিন দেয়া হবে। তাদেরকে আর কখনো থানায় আসতে হবে না-উচ্চতর মহলের ব্যক্তিবর্গ আমাকে এই কথা দিয়েছেন।’ আন্দোলনরত ছাত্র, ছাত্রীদের ওপর পুলিশের অন্যায় হামলার প্রতিবাদ করে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘আমাদের ২-৩শ’ জনের বিপক্ষে মামলা হয়েছে। যখন প্রয়োজন হবে তখন একজন একজন করে জেলখানায় ঢুকানো হবে। সেটি ঘটতে দেওয়া যাবে না। আমি আশা করব, পুলিশ ও প্রশাসন খুব দ্রুত মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। আমার সাথে সরকারের উচ্চতর মহলের এই নিয়েও কথা হয়েছে। তারাও কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছেন। তারা আমাকে যেসব কথা দিয়েছেন, সেগুলো যেন পালন করেন সেই অনুরোধ করব। এরপর বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাবিদ জানিয়েছেন, ‘তারা যদি কথাগুলো না রাখেন, তাহলে আমি মনে করব-তারা শুধু আমার সাথে নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রগতিশীল মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
তিনি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদেরও সমালোচনা করেন। শাবিপ্রবি’র উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে একযোগে দেশের ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করবেন বলে যে খবর প্রচারিত হয়েছে সে প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাহেব পদত্যাগ করলে দেশের ৩৪ জন ভিসি একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন বলেছিলেন; আমার দেখার খুব শখ ছিল। আমার ধারণা সে শখ সহজে মিটবে না। এখন তো তাদের সবার ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা তোমরা টের পাচ্ছ না তোমরা কী করেছ? সারা বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নাড়া দিয়ে দিয়েছ। তোমাদের এই আন্দোলনে বাংলাদেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মডিফিকেশন হয়েছে। জানি না সেটি আমি দেখে যেতে পারব কি-না।’
শাবিপ্রবি’র পরিস্থিতি ক্রমশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আন্দোলনের প্রতিও নানা স¤পৃক্ততা বাড়ছিল। এই আন্দোলনের সুযোগ নিতেও তৎপর হয়ে উঠেছিল সরকারবিরোধি নানা পক্ষ। যার প্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জাফর ইকবালকে পাঠিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। উত্তাল এই ক্যাম্পাসে আবার ফিরেছে নীরবতা। কিন্তু সমস্যার সমাধান এখনো হয় নি। ফলে শিক্ষার্থীরাও তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, নিজে সশরীরে সিলেটে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কথা শুনবেন। সমস্যার সমাধান করবেন। শিক্ষার্থীরা সে অপেক্ষায় রয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে শিক্ষামন্ত্রী আইসোলেশনে রয়েছেন। আইসোলেশনের সময়সীমা শেষ হলে তিনি সিলেট যাবেন বলে জানা গেছে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার মধ্য দিয়ে কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে- বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মুক্তবুদ্ধিচর্চার কেন্দ্র হওয়ার কথা সেখানে কীভাবে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কারা, কীভাবে চালাচ্ছেন? আশা করি এই বিষয়গুলোর প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সুনজর দেবেন।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি সামনে এসেছে। জানা গেছে, দেশের ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর) ছাড়া বাকিগুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। সরকারের পছন্দই একমাত্র মানদণ্ড। পছন্দ প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে সরকার সমর্থক হওয়া, সরকার সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আর এই যোগ্যতা অন্য যে কোনো ধরনের অযোগ্যতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পিএইচডি ডিগ্রির কথা। এক সময় এই ডিগ্রিটি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। সময়ের আবর্তে সেটা উঠে গেছে। সরকারপন্থীদের উপাচার্য হতে এখন আর ডিগ্রিটির প্রয়োজনীয়তাও তেমন পড়ে না। শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উপাচার্য হতে পিএইচডির প্রয়োজন হয় নি।
একজন শিক্ষক যখন শিক্ষকতার আদর্শ ভুলে নিজের রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেন সেখানে আর যাই থাকুক না কেন নীতি-নৈতিকতা থাকে না। নীতি-নৈতিকতা বর্জিত মানুষের দ্বারা যে কোনো কিছুই কথা সম্ভব।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানবিক সমস্যা সমাধানের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে সারা দেশে। এর আগেও আরেকবার এই বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এই ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অধ্যাপক জাফর ইকবালের নাম। ১৯৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ছয়টি হলের নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর একটি ছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে। এই নামকরণের বিরোধীতায় তখন জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন শুরু করেছিল জামায়াত-শিবির চক্র। তাতে ইন্ধন দিয়েছিল বিএনপি। নামকরণ বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। কয়েকদিন ধরে চলা সে আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সিলেট ছুটে গিয়েছিলেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তখন জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনের মুখে প্রায় আট মাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এক পর্যায়ে ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ হল নামকরণের প্রস্তাবটি স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তাই বলে জাফর ইকবালের সেদিনের আন্দোলন বিফলে যায় নি। ‘জাহানারা ইমাম ছাত্রী হল’ নামকরণ ঠিকই হয়েছে। জাফর ইকবালের এবারের ছুটে যাওয়াও নিশ্চয় বিফলে যাবে না। তিনি যে বিষয়গুলো সামনে এনেছেন সেগুলো এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিশ্চয়ই পূরণ হবে। এ প্রত্যাশা শুভবোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষের।
লেখক: সাংবাদিক-সংস্কৃতিককর্মী। হেড অব রিপোর্টিং, ঢাকা প্রকাশ