বিজয় সরণীর সিগনালে এসে; সিএনজি যেন নড়াচড়া একেবারেই বন্ধ করে দিল। এদিকে আম্মার শ্বাসকষ্ট আগের চেয়ে বেড়ে গেছে আরো। এতক্ষণ নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছলেন। এখন বাধ্য হয়ে মুখ হাঁ করলেন।
‘আম্মা, আপনার কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে?’ প্রশ্নটা করেই বুঝলাম কতটা বোকার মতো কথা বলেছি। তীব্র যন্ত্রণায় পা-ুর হয়ে যাওয়া চেহারা দেখেও কী করে এরকম একটা বাক্য আমার মুখে এল জানি না। হয়ত আতংকে আমার মাথাও এলোমেলো হয়ে গেছে।
এই শ্বাসকষ্ট কিন্তু সাত সকালে শুরু হয় নি। হয়েছে গভীর রাতে। এক সপ্তাহ পরেই মিড টার্ম ফাইনাল, তাই রাত জেগে পড়া তৈরি করছিলাম। এমনিতে রাত একটার মাঝেই আম্মা ঘুমিয়ে যান। কিন্তু আজ দু’টোর দিকে একবার আমার রুমে এসে জিজ্ঞেস করলেন কফি খাব কিনা। তখনই আমার টের পাওয়া উচিৎ ছিল কোথাও কোনো গণ্ডগোল হচ্ছে। অথচ আমি টের পেলাম না। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভেজা চুল নিয়ে আবারো আমার রুমের দরজার কোণায় আম্মাকে দাঁড়াতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার আম্মা, এত রাতে গোসল করলে? এখন চুল শুকাবে কখন আর ঘুমাবে কখন?’
আম্মা হাসলেন। কিন্তু হাসিতে কোনো প্রাণ ছিল না, ‘গরমে ঘুম আসছে না। তাই ভাবলাম গোসল করলে ভালো লাগবে।’
গরম? কই সন্ধ্যার দিকেই না ভারী বর্ষণে দুনিয়া ধুয়ে মুছে একাকার। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বেশ ঠাণ্ডা পরিবেশ। তাই পড়তেও আরাম লাগছে। কিন্তু আম্মা গরম কোথায় পেল?
এখন আফসোস হচ্ছে। ইশ, তখনই যদি বুঝতে পারতাম, আসলে গরম না; ওনার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বিধায় অস্থিরতা বিরাজ করছিল শরীর আর মনে। ভোরের দিকে ঘুমানোর জন্য সবেমাত্র লাইট অফ করেছি, ‘রাওফিয়া, আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে চলো। আমার কেমন যেন শরীর খারাপ লাগছে।’
লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। এই সকাল ছয়টার সময় হাসপাতালে কি ডাক্তার পাওয়া যাবে আদৌ। আমার কয়েকজন বন্ধু আছে ইন্টার্ন ডাক্তার। ওদের কাউকে ফোন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেব কিনা ভাবছিলাম। কিন্তু এত ভোরে কি কাউকে ফোন দেওয়া ঠিক হবে?
‘রাওফিয়া, তুমি কাপড় বদলে এসো। আমি তৈরি। মনে হয়, দেরি করা উচিৎ হবে না।’
বুকে হাত দিয়ে পড়ার টেবিলের সামনের চেয়ারটায় বসে পড়লেন তিনি। আমারও মনে হলো, আর দেরি করা আসলেই ঠিক হবে না। আমাদের বাসা মিরপুরে হলেও যাবতীয় চিকিৎসা করানো হয় বারডেম হাসপাতালে। এখন এই এত সকালে বারডেমে যাব নাকি কাছের কোনো ক্লিনিকেই নিয়ে যাব? সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে কারণ বাসায় আমি আর আম্মা ছাড়া কেউ নেই। আমার বড় তিন বোন বিয়ে করে ঢাকার বাইরে থাকেন। বড় ভাই থাকেন আমেরিকায়। বাবা মারা গেছেন আরো দশ বছর আগে।
মিরপুর দশ নাম্বারে একটা ক্লিনিকে আগে নিয়ে যাব ভাবছিলাম। অথচ আমি তৈরি হয়ে আসার পর কঠোর গলায় আম্মা বলে উঠলেন, ‘আমাকে বারডেমে নিয়ে যাও, রাওফিয়া।’
আমাদের পরিবারে আম্মার কথাই শেষ কথা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, অসুস্থ আম্মার কথা মোটেও শোনা ঠিক হয় নি। অন্তত কাছের কোনো হাসপাতালে যেয়ে আগে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নেওয়া জরুরি ছিল।
পাক্কা বিশ মিনিট পর বিজয় সরণির সিগনাল ছাড়ল। যতক্ষণে ফার্মগেট, বাংলামোটর পার হয়ে বারডেমের ইমার্জেন্সিতে পৌঁছালাম; ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন আম্মা! হাউমাউ করে এক চোট কাঁদলে ভালো লাগত আমার। কিন্তু ইমার্জেন্সি ডাক্তার চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘এক্ষুনি রোগীকে আইসিইউতে শিফট করতে হবে।’
অক্সিজেনের নল নাকে প্রবেশ করাতে করাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হুইল চেয়ারে বসানো আম্মাকে নিয়ে লিফটের দিকে ছুটে চলেছে। নিজেকে এতটা অসহায় এর আগে কোনোদিন লাগে নি। কান্নাটা জমে রইলো গলায়। আমি আর কাঁদতে পারলাম না। দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়ে চললাম হুইল চেয়ারের পিছু পিছু।
দুই
‘কেমন আছেন?’
বারডেমের আইসিইউ এর বাইরের লাউঞ্জে বেশ কিছু চেয়ার রাখা। সারাদিনের ধকল শেষে ওতেই গা এলিয়ে মেজো আপাকে ফোন করার চেষ্টা করছিলাম। এই মেয়েটা আর বদলালো না। ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে, সারাজীবনের অভ্যেস। এসময়ে ঘাড়ের ওপর থেকে দুই শব্দের প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে ওপরে তাকালাম।
‘সরি, এই প্রশ্ন করা উচিৎ হয় নি আমার। একজন রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট হাসপাতালে মোটেও ভালো থাকার কথা নয়।’ ডান গালে টোল ফেলে হাসলো যুবক। প্রায় ছয় ফিট লম্বা, শ্যামলা, কোঁকড়ানো চুল।
আমাদের কোনো আত্মীয় কিনা ভাবার চেষ্টা করছিলাম। গত চার ঘন্টায় অনেককেই জানিয়েছি আম্মার অবস্থার কথা। উনি কি আপাদের শ্বশুর বাড়ির কেউ?
আমার কৌতূহলোদ্দীপক চাউনি দেখেই কিনা ভদ্রলোক বলে উঠলেন, ‘সরি পরিচয় দেওয়া হয় নি। আমি মীকাইল। ফিমেল ওয়ার্ডে আমার স্ত্রী ভর্তি আছে। লাউঞ্জেই বসেছিলাম। সকাল থেকে আপনার ছুটোছুটি দেখে ভাবলাম, খবর নিই। কিছু মনে করবেন না প্লিজ। এখানে কি বসতে পারি?’
ভদ্রলোক পাশের সিটটা দেখিয়ে আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করে বসেই পড়লেন। সম্বিত ফিরল আমার। অস্ফুট শব্দ করে উঠলাম, ‘উম্্, না ঠিক আছে। আমি রাওফিয়া। পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।’
‘রোগী আপনার কী হন?’
‘আম্মা, আমার আম্মা।’
‘আপনার সাথে আর কাউকে দেখছি না যে। পরিবারের কেউ এখনো এসে পৌঁছে নি?’
অন্য সময় হলে অপরিচিত কেউ কথা বলতে এলে আমার কাছে উটকো ঝামেলা মনে হতো। বুঝলাম, লোকটি সমবেদনা জানাতেই পাশে এসে বসেছেন। আইসিইউতে আম্মাকে নেওয়ার পর ফর্ম ভর্তি করেছি, বুথ থেকে টাকা তুলে কাউন্টারে জমা দিয়েছি, নিচে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে এনেছি, ইনভেস্টিগেশনের জন্য রশিদ কেটেছি, ফোন করেছি সবাইকে। অনেকক্ষণ ধরে একা একা সব সামলেছি। দীর্ঘ চার ঘন্টা পর, কথা বলার একজন সঙ্গী পেয়ে তাই গড়গড় করে সব বলতে শুরু করে দিলাম।
‘আমার আপা আর দুলাভাইরা ঢাকার বাইরে থেকে রওনা দিয়েছেন। বিকেল নাগাদ চলে আসবেন আশা করি।’
‘বাহ্, বাহ্, বেশ। তা নাশতা করা হয়েছে কি?’
লোকটার কথা শুনে মনে পড়ল, গতকাল রাতের পর পেটে কোনো দানাপানি পড়ে নি। অথচ এখন বেলা বারোটা বাজে। আমার মাথা নাড়ানো দেখে হৈহৈ করে উঠলেন মীকাইল। জোর করে ধরে নিয়ে এলেন বারডেমের ক্যান্টিনে। পেট পুরে সিঙারা, সমুচা খাওয়ার পর বিলটা নিজেই মেটালেন। যদিও বারবার আপত্তি করেছিলাম।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বড় আর সেজো আপা-দুলাভাই চলে এলেন হাসপাতালে। ওদের দেখে সারা সকাল ধরে জমিয়ে রাখা কান্নাটা পাক খেয়ে বেরিয়ে এল। মেজো আপা আসবে ফেরি পার হয়ে, তাই দেরি হচ্ছে।
‘তুই বরং সেজোকে নিয়ে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আগামীকাল সকালে আসিস।’ চোখ মুছতে মুছতে বললেন বড় আপা। আমিও আর আপত্তি করলাম না। বাসায় ফিরে গোসল করে বের হতেই মনে পড়ল গতরাতে এক ফোঁটা ঘুমানোর সুযোগ হয় নি। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই সারাদিনের ক্লান্তি একদম জেঁকে বসল যেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
তিন
‘আপনার আম্মা এখন কেমন আছেন?’
ক্যান্টিনে নাশতা করছিলাম। আমার ঠিক মুখোমুখি চেয়ারে এসে বসল মীকাইল। হাতে দুই কাপ কফি, টেবিলে রেখে দিলেন সন্তর্পণে। বড় করে চুমুক দিলাম সেই কফির কাপে। রাতে ছাড়া ছাড়া ঘুম হয়েছে দুশ্চিন্তায়। এসময়ে কফির খুব প্রয়োজন ছিল আমার। কৃতজ্ঞ চিত্তে তাকালাম লোকটির দিকে।
‘তেমন একটা ইমপ্রুভ করে নি। সকালে মেডিকেল অফিসার জানালেন, আম্মাকে নাকি লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আসলে আমার সব ভাইবোন অনেক দূরে দূরে থাকে। আম্মা ছাড়া আমি খুব একা হয়ে গেছি।’
‘বুঝতে পারছি, রাওফিয়া। আল্লাহ ভরসা। আশা করি খুব শিগগির আন্টি আইসিইউ থেকে বের হয়ে আসবেন।’
‘ইনশা আল্লাহ’, মাথা দোলালাম আমি। সকালে হাসপাতালে এসে বড় আপাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। সেজো আপা লাঞ্চ নিয়ে আসবেন দুপুরের দিকে।
আমি আর আজ বাসায় গেলাম না। সন্ধ্যায় আইসিইউ লাউঞ্জেই এক গাদা মানুষের সামনে মেজো দুলাভাইয়ের সাথে বড় আপার প্রচ- বাকবিত-া হয়েছে হাসপাতালের বিল মেটানোর ব্যাপার নিয়ে। গত বত্রিশ ঘন্টায় অনেকখানি বিল উঠে গেছে। কী বিব্রতকর পরিস্থিতি।
রাত আটটার দিকে হন্তদন্ত হয়ে মীকাইল এসে উপস্থিত।
‘চলেন একসাথে ডিনার করি। বাসা থেকে আম্মুর হাতে রান্না করা খিচুড়ি নিয়ে এসেছে আমার ভাই।’
ডিনারে বসলেও অন্যান্যবারের তুলনায় অনেকটা অস্থির মনে হলো মীকাইলকে। ওনার ওয়াইফ কি বেশি অসুস্থ?
কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব, ওই মুহূর্তে তিনি বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা, আন্টির অবস্থা নাকি অবনতি হয়েছে আরো? কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনারা পরিবার থেকে?’
দপ করে খিদেটা মরে গেল আমার। মীকাইলের আন্তরিকতা আমার মনের ওপর যে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে, তা এই বেচারা বুঝতেও পারছে না।
‘আসলে আমরা ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। খুব সম্ভবত আম্মাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। ভাইয়া আগামীকাল সকালে দেশে ফিরলেই লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হবে।’ ছলছল করে উঠল চোখ দুটো।
‘আমি- আমি সরি।’
মীকাইলের দিকে তাকালাম। ওকে কীভাবে বোঝাব, যতক্ষণ লাইফ সাপোর্ট থাকছে ততক্ষণ আম্মা পাশে আছে ভেবে আমি সিকিউরড বোধ করছি। ওটা খুলে নেওয়া মাত্র আমি এ পৃথিবীতে ভীষণ একা হয়ে যাব। সম্পূর্ণ একা!
চার
‘আপনার ভাইয়া কখন এসে পৌঁছাবেন? আজ সকালে আসবেন, বলেছিলেন।’ ডালে পরোটা ডুবিয়ে স্বভাব সুলভ টোল ফেলে হাসল মীকাইল। আজকেও তার মেহমানদারিতে ক্যান্টিনের নাশতা দিয়ে পেট পূজো করছি। লোকটা এত যতœ আর খেয়াল রাখছে গত তিনদিন ধরে। অথচ আমি আজ পর্যন্ত একটা না ধন্যবাদ জানিয়েছি, না একবারের জন্য তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছি!
‘ওহ্, হ্যাঁ। করোনা টেস্টের কারণে ইমার্জেন্সি ভিসা পেতেও দেরি হচ্ছে শুনলাম। ভাইয়া আজ আসতে পারবে কিনা, জানি না।’
কী বলেছি জানি না। আমার কথা শেষ না হতেই হুট করে গালভর্তি হাসি মুছে গেল লোকটির। ভীষণ উত্তেজিতে হয়ে গেলেন, ‘মানে! কী বলছেন এসব? ভাইয়া কবে ভিসা পাবে না পাবে সেজন্য দিনের পর দিন বসে থাকবেন আপনারা? টাকার মায়া কি নেই? আপনার কোনো দুলাভাই-ই তো হাসপাতালের বিল দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। তারপরও কীভাবে অপেক্ষা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন?’
মীকাইলের লাল টুকটুকে দৃষ্টি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আশ্চর্য! এই লোক আমাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে এভাবে কথা বলছেন কেন!
‘আমাদের আম্মার চিকিৎসা খরচ কীভাবে দেব সেটা সম্পূর্ণই আমাদের ব্যাপার। আপনি এভাবে বলার কে?’ কম্পিত কন্ঠে প্রশ্ন করলাম। রাগ লাগছে প্রচণ্ড।
‘বলব না? তিনদিন ধরে তো দেখছি আপনাদের, তাই না?’
‘আশ্চর্য! আপনি কি আমাদের ওপর স্পাইয়িং করছেন?’
‘করলে করছি।‘ মীকাইলের অদ্ভুত আচরণে ধুকপুক করে উঠল হৃৎপি-। অবাক হওয়ার বদলে এখন অল্প অল্প আতংক এসে জুড়ে বসল আমার মনে?
‘আপনি কে? কী চান?’
‘আরে বাবা, এখনো বোঝেন নি? আমি আপনার আম্মার দখল করে রাখা আইসিইউ সিটটা চাই। পরশুদিন দুপুর থেকে আমার স্ত্রী তীব্র যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। ঢাকার কোথাও সিট খালি নেই। আপনার রোগীর দিকে খেয়াল রাখার ফাঁকে দিনরাত সিট খুঁজেছি; পাই নি, বুঝেছেন? লাইফ সাপোর্ট যখন খুলেই ফেলবেন, তখন অযথা দেরি করে আমার স্ত্রীর জীবনটা সংশয়ে ফেলছেন কেন? দয়া করুন। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে ফিমেল ওয়ার্ডে। তার আইসিইউতে চিকিৎসা প্রয়োজন। আমার স্ত্রীকে বাঁচতে দিন, প্লিজ!’
করজোড়ে মীকাইলের বলা কথাগুলো শুনে আমি কেবল বিস্ফারিত নয়নে তাকিয়েই থাকতে পারলাম। পলক ফেলতে ভুলে গেলাম।
তার মানে এই কয়দিন আমি যেটাকে ভেবেছি কুশল বিনিময়, সমবেদনা, আন্তরিকতা- তার সবই ছিল ধোঁকা। বরং এই লোক, মনেপ্রাণে প্রার্থনা করে আসছিলেন, কত দ্রুত আম্মা আইসিইউ থেকে বের হয়ে আসবেন; সেটা জীবিত না হোক মৃত- আর কত জলদি একটা সিট ফাঁকা হবে, যেখানে মীকাইলের স্ত্রী চিকিৎসা নিতে পারবেন! মানুষ এতটাও স্বার্থপর হতে পারে? বিষয়টা অনেকটা এরকম যেন কেউ একজন দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে আরেকজন দুনিয়াতে থাকার টিকেট খুঁজে পেল!
হাউমাউ করে কাঁদলে অনেকটা আরাম বোধ হতো। কিন্তু আমি কাঁদলাম না। অর্থহীন চোখে তাকিয়ে রইলাম, প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক অসহায় যুবক মীকাইলের দিকে।
ঢাকা থেকে