বর্ষ ১, সংখ্যা ৮, সেপ্টেম্বর ২০২১
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
বিপ্লব দত্ত
দাম:
বাংলাদেশে ২৫ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ২.৪৯ ডলার
একটু একটু করে পায়ে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে অনুস্বর আটে এসে পৌঁছুল। প্রকাশিত হলো অনুস্বরের অষ্টম সংখ্যাটি। এবারের বিষয় উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। আশির দশক থেকেই আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বলে জানি। কিন্তু বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ, সদ্য। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ভোগ করতে শুরু করেছে।
১৯৭১ সালে বিশ্বে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। জাতিসংঘের মান অনুসারে সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ তুলনামূলক দুর্বল, সেসব দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ১৯৭৫ সালে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ।
২০১৪ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল থেকে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্টে উন্নয়নশীল দেশসমূহের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। চলতি ২০২১ সালে এক দফা পর্যবেক্ষণের পর ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের মাপকাঠিতেও বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘ তার সদস্যদেশগুলোকে এলডিসিগুলোর মাথাপিছু আয়, মানবসসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ তিনটিকে সূচক ধরে এ সূচকগুলোর কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের মাধ্যমে কোনো একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কিনা, সে যোগ্যতা নির্ধারণ করে।। মানে হলো, মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে তিনটি সূচকের সব কটি পূরণ করে পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়েছে।
আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নশীলতার চিত্রটি দেখতে চেয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই অনুস্বরের সীমাবদ্ধতা কারণে সে দেখাদেখি সংক্ষিপ্ত হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেঁধে দেওয়া পৃষ্ঠা সংখ্যা। তবুও এবারের অনুস্বরে অতিরিক্ত চারপৃষ্ঠা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেল।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভাবমূর্তি উন্নয়নের ফলে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া সুবিধাজনক হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো উৎসাহী হবেন। এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ালে কর্মসংস্থান বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে। কর্মসংস্থানটা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় দরকার। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের ফলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারালো বাংলাদেশ। অবশ্য প্রস্তুতি পর্বে এসব সুবিধা উত্তরণের জন্যে বাংলাদেশ সময় চেয়েছে। ফলে প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
সরকার বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া কোনো অর্থ বহন করবে না যদি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য সরিয়ে দেয়া না যায়। মূল ধারার বাংলা মাধ্যম স্কুল এবং এর ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, আলিয়া ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা এবং কওমি ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা- দেশে এখন শিক্ষার চারটি ধারা প্রবহমান। আগে তিনটি ছিল। বেড়ে চারটি হয়েছে। এদের পাঠ্যবইও একের সঙ্গে অন্যের বিস্তর ব্যবধান।
অন্যদিকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এসব কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা উন্নত সেটি দেখা দরকার এবং আরও উন্নত করা দরকার। কেননা উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে মানুষকে এখন ব্যক্তি মালিকানার হাসপাতাল ও ক্লিনিকেই ছুটতে হয়। শিক্ষা ও চিকিৎসাকে যে এদেশে পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে- এই দুর্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এবং বেরিয়ে আসবার এই দায়টি সরকারেরই।
বলা হচ্ছে, পরিবর্তনের হাওয়ায় প্রতিনিয়ত পালটে যাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চেহারা। খাদ্য ঘাটতি থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হচ্ছে দেশ- আমরা এই বলায় কণ্ঠ মেলাবার সুযোগটি চাই।
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।