বর্ষ ২, সংখ্যা ৩, এপ্রিল ২০২২
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
মোহাম্মদ আসাদ খান
পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪০
দাম
যুক্তরাষ্ট্রে ২.৯৯ ডলার
বাংলাদেশে ৩০ টাকা
সংস্কৃতির চর্চাই পারে সোজা করে দাঁড় করাতে
ক্রম বিবেচনায় বর্তমান সংখ্যাটি অনুস্বর-এর পনেরতম সংখ্যা। এবারের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সংস্কৃতিতে বৈশাখ’। এপ্রিলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন। সঙ্গত কারণেই অনুস্বর পয়লা বৈশাখের কথা বলতে চেয়েছে। অভিপ্রায়টি ছিল বাঙালীর সর্বজনীনতাকে খুঁজে এনে পাঠকের সামনে তুলে ধরা। তুলে ধরবার এ দায়টির সবটুকুই লেখকের। তাঁরা সে দায়িত্বটি কতটুকু পালন করেছেন সে সিদ্ধান্ত একান্তই পাঠকের। ‘অনুস্বর’ লেখক-পাঠকের মেলবন্ধন ঘটাবার দায়িত্বটি সাধ্যমত পালন করবার চেষ্টা গেছে।
বাংলা নববর্ষ এ দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্য। পয়লা বৈশাখ উদযাপন বাঙালীর ঐতিহ্য। বাঙালির এ ঐতিহ্য ও উৎসব সবর্জনীন। পৃথিবীতে প্রচলিত যত বর্ষপঞ্জি রয়েছে তার সকলই কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু বাংলা সন কিংবা পয়লা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ধর্মের কোনো যোগ নেই। আমরা সকলেই জানি, কৃষকের সুবিধে করবার পাশাপাশি খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়েছিল। পরবর্তীতে পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে যুক্ত হন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা তাদের দেনা-পাওনার হিসেব মেটানোর দিন হিসেবে বেছে নেন পয়লা বৈশাখকে। যুক্ত করেন নতুন হিসেব- হালখাতা। সেইসঙ্গে সর্বসাধারণের মধ্যে গড়ে ওঠে এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসব।
এখন পয়লা বৈশাখকে ঘিরে উৎসব-পার্বণ-আনুষ্ঠানিকতার কোনো ঘাটতি নেই। পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে নানান আনুষ্ঠানিকতার আধিক্য। আছে চারু ও কারুকলার ছাত্রছাত্রীদের বর্ণিল মিছিল, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ। লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এসব আয়োজন। রমনায় জমে মাটির সানকিতে পান্তা-ইলিশ আর নানান রকমের ভর্তা ভোজন। কিন্তু এগুলো সাম্প্রপ্রতিক সংযোজন। ইলিশ আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। বাংলা নববর্ষে পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন আগে একেবারেই ছিল না। এর সঙ্গে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির কোনো সংযোগও নেই। কৃষকরা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশ খেয়ে বছর শুরু করত- এটা মোটেও সত্য নয়।
পুঁজিবাদ সবকিছুকেই পণ্য বানাতে চায়। পণ্য বানাতে নিত্যই চাই উপকরণ। পান্তা-ইলিশ এখন পুঁজিবাদের সে উপকরণ। তারা পান্তা-ইলিশকে পয়লা বৈশাখের ব্যবসায়িক ছাপ লাগিয়ে দিয়েছে। গণমাধ্যমে ইলিশের নানান রকম রান্না, বিজ্ঞাপনে ইলিশ, নাটকে ঘটনার পরম্পপরায় ইলিশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে ইলিশ- এভাবে সকলখানেই বৈশাখের সঙ্গে ইলিশকে এমনভাবে জুড়ে সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছে, তাতে মনে হয় পান্তা-ইলিশ ছাড়া বৈশাখ একেবারেই অর্থবহ নয়।
বাস্তবতা হলো পুঁজিবাদের আস্থা শুধু মুনাফায়। মুনাফাই তার নীতি। এই মুনাফার জন্যে সে ব্যবসা থেকে লুণ্ঠন- কোনো কিছুকেই অবৈধ মনে করে না। সমষ্টিকে সে ভাঙতে চায়। কারণ ভিত্তিটি তার ব্যক্তির স্বার্থ। সে জানে ব্যক্তি স্বার্থবাজ হলে পরেই ভোগ করতে উন্মক্ত হবে। এজন্যেই সমষ্টি থেকে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা তার জন্যে জরুরি খুব। আর জরুরি এই ব্যাপারটার অন্তরায় হলো সংস্কৃতি। কেননা সংস্কৃতি মানুষের জীবনযাপন, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ভাষা পদ্ধতি, যোগাযোগ এবং আচর-আচরণ সকল বিন্দুর সমষ্টি। কিন্তু এদের দরকার বিকৃত সংস্কৃতি। আমরা যাকে অপসংস্কৃতি ডাকি, সেইটিই। কেননা সংস্কৃতি মানুষে মানুষে মিলন ঘটায়। তার মূলই হলো সৃষ্টিশীলতা। সংস্কৃতি তো মানুষে গড়ে। এই মানুষেরাই সমাজ গড়ে। সমাজটা গড়ে ঐক্যর ভিত্তিতে। ফলে ব্যক্তিকে সমষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা খুব দরকার। বিছিন্ন করা গেলেই তবে সৃষ্টিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা মানুষ থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হলেই তবে তৈরি হয় শত্রুতা।
সে কারণে সংস্কৃতির চর্চাটা আমাদের জন্যে খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু গোঁকুলে বেড়ে ওঠা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীটি চায় না সংস্কৃতির এই চর্চাটা চলুক। তারা যেহেতু অসত্য তাই তারা জানে, সংস্কৃতির চর্চা তাদের বিকৃতিকে খুব সহজেই সকলের সামনে প্রকাশ করে দেবে। আর এইখানেই তাদের ভয়।
আর ঠিক একারণেই পয়লা বৈশাখকে এখন আমাদের খুব করে দরকার। দরকার এর নিগূঢ় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি। এর চর্চাটিই আমাদেরকে পৌঁছে দেবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থা।
এবারের সংখ্যায় লিখেছেন যারা:
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
মাহমুদ জামাল কাদেরী
লুৎফুল হোসেন
অলি সেন
অজিত দাশ
জাহান আরা
আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ
দারা শামসুদ্দীন
ইসরাত নিপু
শর্মিষ্ঠা দাস
ড. নাজমুন খাতুন
শাহ্ জে. চৌধুরী
মুবিন খান
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।