বর্ষ ২, সংখ্যা ৭, আগস্ট ২০২২
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
মোহাম্মদ আসাদ খান
দাম:
বাংলাদেশে ৪০ টাকা
যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৪৯ ডলার
পরিবেশ ধ্বংসে আমরাও পিছিয়ে নেই
বর্ষাকাল মানেই আকাশজুড়ে গমগমে মেঘ, ঝমঝমিয়ে ঘনঘোর বৃষ্টি, চারপাশ জুড়ে কেমন যেন অদ্ভুত একটা কাব্যিক আবহ। আবার বর্ষাকাল এলেই ফোটে কদম ফুল। কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষাকালের দূত। বর্ষা এলে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সতেজ। বর্ষার স্পর্শে জনজীবনকেও দেয় প্রাণের ছোঁয়া। আবার বর্ষা এলেই নদীনালা খালবিলের জল উপচে তলিয়ে যায় সব। ক্ষেতের ফসল, পথঘাট, গাছপালা, বসত বাড়ি- সবই। আসে বন্যা। এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের স্থাবর-অস্থাবর সকলই। যা নিয়ে যেতে পারে না, ধ্বংস করে দিয়ে যায়।
অনুস্বরের এবারের সংখ্যাটির বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বর্ষা ও বন্যা’।
বর্ষা এলেই ভাবনা আসে কাজে যাওয়ার পথটাতে কতটা জল জমেছে? নর্দমার নোংরা উপচে রাজপথ জুড়ে সয়লাব হবে না তো? জুতো পায়ে অফিস অবধি যাওয়া যাবে না খুলে হাতে নিয়ে হাঁটতে হবে? রিকশা-সিএনজি বাস পাওয়া যাবে তো? সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছুনো যাবে? ষড়ঋতুর উন্নয়নশীল এই দেশের নাগরিক জীবনে এভাবেই বর্ষা ঋতুটির আগমন ঘটে। যদিও যথাযথ বৃষ্টিপাত বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় ফসল ফলাতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় ভেঙে পড়ে কৃষি। সেকারণে বর্ষাকাল গুরুত্বপূর্ণ বটে। কিন্তু গেল ক’বছর ধরে পাল্টে গেছে প্রকৃতি। এ বছর আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের শেষ ভাগ হলেও এখনও দেখা নেই বর্ষাকালের কাঙ্ক্ষিত বর্ষার। ভাটি অঞ্চল যখন তীব্র দাবদাহে পুড়ছে, সিলেট জেলা তখন ৬০ ভাগ জলের তলে। স্মরণকালের ভয়াবহতম এ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এবারের বন্যায় জামালপুর, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলে সরকারি হিসেবে মারা গেছেন প্রায় ৮৪ জন মানুষ।
অবশ্য জুনের এই বন্যার পর ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বন্যার উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি মনে করি বন্যার প্রয়োজন রয়েছে। বন্যা এখনও ভয়াবহ রূপ নেয় নি। যারা লেখালেখি করেন তাদের বলব, দয়া করে ভীতি সৃষ্টি করবেন না।’ (বিডি নিউজ ৭ জুলাই ২০২২)
মৎস্য বিভাগ এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল দু’ হাজার। বেসরকারি হিসাব মতে, এখন সে সংখ্যা এসে ঠেকেছে একশ’তে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখলদারি ও আবাসন চাহিদায় সাড়ে তিন দশকে ৭০ হাজার হেক্টর জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হয়ে গেছে এক হাজার নয়শ’ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার। ৬৪টি প্রজাতির দেশীয় মাছ প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে। এর মধ্যে ৩০ প্রজাতিকে সংকটাপন্ন ও ৯ প্রজাতির মাছকে চরম সংকটাপন্ন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়াসহ নানা ধরনের সারের ব্যবহার ও পানি শুকিয়ে মাছ আহরণের কারণে দেশীয় অনেক মাছের দেখা আর মেলে না।
অন্যদিকে গাছ কেটে বনজঙ্গল উজাড়, পাহাড় কাটা, নদীনালা-খালবিল-জলাশয় ভরে স্থাপনা নির্মাণ, কলকারাখানার কালো ধোঁয়া, সকল বর্জ্য নদীতে ফেলে নদী দূষণ চলছেই। অথচ এভাবে জলাশয় ভরাট হতে থাকলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নীচে নেমে যাবে। দেখা দেবে মিঠা পানির সংকট। নদী ড্রেজিং এখন খুব দরকার। কিন্তু খবরের কাগজ জানাচ্ছে, সরকারের নদী খননের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সরকারেরই কোনও সংস্থা কিংবা কার্যক্রম। অথচ নদী খননের গতি বাড়ানো ও নিয়মিত করা খুব করে দরকারি। প্রতিবছর যে পরিমাণ পলি জমে তারচেয়ে বেশি পরিমাণ পলি অপসারণ করা দরকার। মনে রাখতে হবে, প্রতি বছর বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয় সেটি বন্ধ না করলে চলতে থাকা উন্নয়ন ও তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
উন্নত বিশ্বের উন্নত ও বুদ্ধিমান মানুষ প্রকৃতি ধ্বংস শেষে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠেছে। প্রশ্ন হলো, আমরাও কি পিছিয়ে আছি?
এবারের সংখ্যায় লিখেছেন:
ড. নাজমুন খাতুন
নিশাত তাসনিম
মাসুদ অর্ণব
মিত্র সত্যপ্রকাশ
হোসেন ইমাম
লুৎফুল হোসেন
মাহমুদ জামাল কাদেরী
শাহ্ জে. চৌধুরী
জাহান আরা
আহসান কবির
মুবিন খান
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।