বর্ষ ২, সংখ্যা ৮
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
মোহাম্মদ আসাদ খান
দাম
বাংলাদেশে ৪০ টাকা
যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৪৯ ডলার
রূপান্তরিত বিশ্বে নির্ভর করছে বিশ্ববাসীর আগামীকাল
একুশ বছর আগে, সন্ত্রাসীরা সেসময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকটিতে হামলা চালায়৷ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে ছিনতাই করা বিমান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সন্ত্রাসীরা। একইভাবে হামলা করা হয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনেও। এ হামলায় ২ হাজার ৯৯৭ জন মানুষ মারা যান। আহত হন ৬ হাজারেও বেশি মানুষ । ৯/১১ নামে পরিচিত ওই হামলা আমেরিকায় হলেও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়েছিল পুরো বিশ্বজুড়েই। আমূল বদলে দিয়েছিল বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্র। আমরা এখন সেই পরিবর্তিত বিশ্বেরই নাগরিক।
অনুস্বর চেয়েছে বিশ্ব বদলে দেওয়া এই ঘটনাকে ধারণ করতে। ফলে অনেকটা বিশেষ সংখ্যার আদলে অনুস্বরের সেপ্টেম্বর সংখ্যার সবটা জুড়েই ৯/১১ সম্পর্কিত লেখা দিয়ে সাজানো হয়েছে। আমরা চেয়েছি অনুস্বরের আর সকল সংখ্যার মতো ৯/১১ সংখ্যাটিও একটা ডকুমেন্ট হয়ে থাকুক। সেকারণে ৯/১১-এর ইতিহাসকে ধরবার প্রচেষ্টাটি সাধ্যের মধ্যে আপ্রাণ ছিল বটে। তবে সীমাবদ্ধ পরিসরের কারণে অনেক লেখাই প্রকাশ করা যায় নি। তারসঙ্গে কিছু ভালো লেখাও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে দেরীতে পৌঁছুনোর কারণে। অনুস্বর লেখকদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ রইল তাঁরা যেন নিজের লেখাটি নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাটি করেন।
৯/১১ হামলার পরদিন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ ২০০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হামলাকারীদের নির্মূল করতে পাল্টা আক্রমণের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই শত্রুকে জয় করতে সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করবে।’ গেল ২০ বছর ১১ মাস ৩ সপ্তাহ ১ দিনের যুদ্ধে আমেরিকার খরচ হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি। এছাড়া আফগানিস্তানে আমেরিকানদের প্রতিদিন খরচ হয়েছে তিরিশ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। অন্যদিকে আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী এই যুদ্ধ আফগানিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকে নি। বিশ বছরে ছড়িয়েছে ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়াসহ অন্তত চব্বিশটি দেশে। মারা গেছেন প্রায় ৯ লাখ মানুষ। আর ঘরহারা হয়েছেন প্রায় চল্লিশ মিলিয়ন।
আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করবার মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বুশ বিশ্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘পৃথিবীর সব অঞ্চলের দেশগুলোকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, হয় সে আমাদের সঙ্গে অথবা সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে।’ প্রেসিডেন্ট বুশের এই উচ্চারণ বিশ্বের জন্যে শুভ হয় নি। এই উচ্চারণ আমেরিকার মাটিতে ইসলামভীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ণবাদের মতো করে বাড়িয়েছে ইসলাম বিদ্বেষকেও। অন্যদিকে কথিত ‘ওয়ার অন টেরর’ নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারে নি। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণায় জানিয়েছে, ৯/১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্র যেসব যুদ্ধে জড়িয়েছে, তাতে ব্যয় হয়েছে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এত কিছুর পরও স্থায়ী কোনও ফলাফল আসে নি। বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত এই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ঘরহারা মানুষের প্রকৃত সংখ্যাটা হবে ৪ কোটি ৮০ লাখ থেকে ৫ কোটি ৯০ লাখ। এই যুদ্ধগুলো দেশে দেশে মানুষকে শরণার্থী করেছে। বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় নি।
৯/১১-এর পালটে দেওয়া পৃথিবীটি এখন আরও অনেক পালটে গেছে। এই পালটে যাওয়াটা আমাদেরকে নতুন করে জানিয়েছে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ২০২০ সালে তালেবানের শর্ত মেনে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চুক্তিতে স্বাক্ষর করবার পর বলেছেন, এ চুক্তির মাধ্যমে শান্তির সূচনা হলো। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে। ৯/১১ হামলার পর ২০ বছর ধরে আমেরিকা যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে ‘শান্তি চুক্তি’কে আমেরিকার ব্যর্থতা হিসাবে দেখা হচ্ছে। একে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় সুস্পষ্ট প্রতীক হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
গেল বিশ বছরের ঘটনাপ্রবাহ, আমেরিকা তার কৌশল আর ব্যর্থতা থেকে যে শিক্ষা নেবে তার ওপর নির্ভর করবে তাদের আগামী ভূমিকা। ৯/১১-এর ও পরবর্তী ২০ বছরের অভিজ্ঞতার বাস্তবতায় বিশ্ব এখন কোন্ পরিবর্তিত বিশ্বে রূপান্তর ঘটে তার ওপরই নির্ভর করছে বিশ্ববাসীর আগামীকাল।
.
এবারের সংখ্যা যারা লিখেছেন:
জাহান আরা
আজিজুল পারভেজ
সুলতানা পারভীন শিমুল
আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ
ওয়াকিল আহমেদ
রেজোয়ান সরকার
আফসার বিপুল
তৌহিদুর রহমান
মাইশা খান
শাহ জে. চৌধুরী
রেখা আক্তার
ইকবাল হোসেন রায়হান
মুবিন খান
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।