বর্ষ ১, সংখ্যা ৪, মে ২০২১
সম্পাদক
শাহ্ জে চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ
দাম:
বাংলাদেশে ৫০ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ ডলার
চারপাশ জুড়ে ভীষণরকম দোদুল্যমানতা নিয়েও বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত হলো অনুস্বর ঈদ সংখ্যা। এবারের সংখ্যাটি অনুস্বরের চতুর্থ সংখ্যা। পৃথিবী জুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের বছর পেরুনো মহামারী। এমন বাস্তবতায় প্রকাশনায় সদ্য আত্মপ্রকাশ করা অনুস্বরের পক্ষে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যর দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হৃষ্টপুষ্ট শরীরটি নিয়ে এভাবে তড়িৎ চলে আসাটা বিস্ময়ই বটে। কিন্তু এই বিস্ময়টিই ঘটে গেল অনুস্বরের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশে।
মে মাসের অনুস্বর মে দিবস নিয়ে হবে— এমনটিই ভাবনা ছিল। কিন্তু ঈদুল ফিতর তার প্রভাব নিয়ে হাজির হওয়াতে পরিকল্পনা গেল পাল্টে। পৃথিবী জুড়ে বছর পেরুনো মহামারীতেও ঈদুল ফিতরের আগমনটি এখনো ‘এল খুশির ঈদ’। তবে মে দিবসের ভাবনাটি বজায় আছে। আছে বাস্তবতাতেও। অনুস্বরের নিয়মিত ক’জন লেখক দৃষ্টি দিয়েছেন মে দিবসে।
রক্তাক্ত এক ইতিহাসের সাক্ষী মে দিবস। শ্রমিকরা সেদিন রক্তের বিনিময়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। দীর্ঘদিনের অমানবিক পরিশ্রম আর কম পারিশ্রমিক পাওয়া শ্রমিকরা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরটি ছিল সেসময়ের শিল্পায়নের অন্যতম কেন্দ্র। আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শ্রমিকেরা আসতেন কাজ করতে। সেখানে তাদেরকে গড়ে মোটে দেড় ডলারের বিনিময়ে দিনরাত অমানবিক পরিশ্রমে সপ্তাহের ছয় দিনই কাজ করতে হতো। শ্রমিকেরা যেন হয়ে উঠেছিল ‘যন্ত্র বিশেষ’। শ্রমিকদের সহ্যর সীমা যখন অতিক্রম করল তখন সকলে সংঘবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা করলেন। করলেন আন্দোলন। অধিকারের দাবিতে আন্দোলন। দাবিটি ছিল, ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা নিজেদের জন্যে।
১৮৮৬ সালের পর পেরিয়েছে ১৩৫ বছর। ঢাকা শহরে রোজ সকালে পথে বেরুলেই দেখা মেলে অসংখ্য নারীপুরুষের। হাতে তাদের টিফিন ক্যারিয়ার। নারীর সংখ্যাটিই বেশি। গার্মেন্টস কর্মী তারা। কাজ শেষে যখন গার্মেন্টস থেকে বেরোন, ঘড়িতে তখন রাত আট নয় দশ, কখনো তারও বেশি। ও সময় বাড়ি ফিরে রান্না-খাওয়া, তারপর ঘুম। পরদিন খুব ভোরে উঠে আবারো রান্না। তারপর টিফিন ক্যারিয়ারে সে খাবার নিয়ে আবারো গার্মেন্টসে। যে ঘরটিতে, যে পরিবেশে তারা বসবাস করেন, তা সুস্থ মানুষের পক্ষে বসবাস যোগ্য নয় বলেই দাবি অনেকের।
আমাদের দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা নিজেদের জন্যে পান না। পারিশ্রামিক হিসেবে যা পান তা দিয়ে সুস্থধারার জীবন যাপন সম্ভব নয়। সে পারিশ্রামিকও মালিকপক্ষ ঠিকভাবে পরিশোধ করেন না। পারিশ্রামিকের দাবিতে শ্রমিকদেরকে রাজপথে আন্দোলন-বিক্ষোভ করতে হয়। তাতেও বিপদ। মালিকপক্ষ আইনের বর্ম পরে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। গুলি চালিয়ে মেরেও ফেলে। ১৩৫ বছরেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা নিজেদের জন্যে তো দূর, মৌলিক অধিকারই নিশ্চিত হয় নি।
এখন করোনা মহামারীতে ‘কাজ বাড়ন্ত’। করোনা মহামারীতে সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। এ সময়ে ২৩২টি বা ৭ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লে অফ ঘোষণা করেছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ কারখানা। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার মধ্যে ৭০ শতাংশ তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পেরেছে। আর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের আরও যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা, তা দিতে পেরেছে মাত্র ৪ শতাংশ। মহামারীতে বন্ধের পর কারখানা পুনরায় খুললেও ৬০ শতাংশ কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিতে পেরেছে। তারমানে এক দিকে ৩০ শতাংশ শ্রমিকদের বেতন অনিশ্চিত, অন্যদিকে ৪০ শতাংশ শ্রমিকের কাজ ফিরে পাওয়া অনিশ্চিত। ঢাকার পথে-ঘাটে বেড়েছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। বেড়েছে রিকশাচালক। ফুটপাতে বেড়েছে নানান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
এমন বাস্তবতায় ‘এল খুশির ঈদ’। নিম্ন আয়ের এসব মানুষদের জন্যে খুশির ঈদ কতটা খুশির হবে- এটি একটি বড় মাপের প্রশ্নবোধক বটে। তবুও তিরিশ দিনের সিয়াম সাধনার পর আসছে ১৪ মে বাংলাদেশে উদযাপিত হবে মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এবং বাঙালির অন্যতম বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মুবারক।
অনুস্বরের প্রতিনিধি, পৃষ্ঠপোষক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা।
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।
2 Comments
Shariful Hassan
how can i get april and may copy?
অনুস্বর
ঘরে বসে ‘অনুস্বর’ পেতে আপনার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর টেক্সট মেসেজ করুন।
অথবা ইমেইলেও পাঠানো যাবে।
এক বছরের জন্যে গ্রাহক হতে বাংলাদেশে ৫০০ টাকা, নিউ ইয়র্কে ৩৫ ডলার।
টাকা ০১৭৩৫ ৯২২ ০৭৭ নম্বরের বিকাশ মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে +১ (২১২) ৯২০ ০৭০০ নম্বরে যোগাযোগ করুন।
বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশে ০১৮৬০ ৯৫৯৬৪০ ও যুক্তরাষ্ট্রে +১ (২১২) ৯২০ ০৭০০ নম্বরে যোগাযোগ করুন।