বর্ষ ১, সংখ্যা ৯, সেপ্টেম্বর ২০২১
সম্পাদক
শাহ্ জে. চৌধুরী
নির্বাহী সম্পাদক
মুবিন খান
প্রচ্ছদ
বিপ্লব দত্ত
দাম:
বাংলাদেশে ২৫ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ২.৪৯ ডলার
অনুস্বরের এবারের সংখ্যাটি নবম সংখ্যা। দেখতে অনুস্বরের বয়স নয় মাস হয়ে গেল। নয় সংখ্যায় পদার্পণের এই পথটি অনুস্বর মসৃণ গতিতেই চলতে চলতে এখন অবধি এসেছে। অনুস্বরের এবারের বিষয় ছিল ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।’ সংখ্যাটির অধিকাংশ কাজ যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দেয় সরকার। শিক্ষামন্ত্রী অনেকদিন থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার কথা বলে আসছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এবারের ঘোষণায় তিনি হয়ত সে কাজটিই করতে চাইলেন।
কিন্তু এটাকে শিক্ষানীতির পরিবর্তন কিংবা সংস্কার বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, প্রণীত শিক্ষানীতির আলোকেই নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বড় পরিবর্তন এনে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় সারা দেশে এই শিক্ষাক্রম কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে- এইটিও একটি বড় প্রশ্নবোধক বটে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর এবারের পরিবর্তনটি বড় ধরনের পরিবর্তন। কিন্তু এর প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। এবং প্রয়োগের সময়টির জন্যে আমাদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এ বছর জুনে জানিয়েছে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লক্ষ ১ হাজার। মোট জনসংখ্যার কতভাগ শিক্ষিত আমরা এইটি জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই তথ্যটি পাওয়া যায় নি। কারো কাছেই নেই। যেটি পাওয়া গেল সেটি সাক্ষরতার হার। শিক্ষা ও সাক্ষরতা সমার্থক ও কাছের মনে হলেও, তারা এক নয়, ভিন্ন। অক্ষরের সঙ্গে যার পরিচয় আছে, মানে যিনি পড়তে ও লিখতে পারেন তিনিই সাক্ষর। অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন আর শিক্ষিত তো এক নয়। শিক্ষিতের হারটি কেন পাওয়া গেল না সেটি বোধগম্য নয়। তবে ২০১৫ সালের ১৬ জুন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের এক প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছিলেন, সে সময় শিক্ষিতের হার ছিল শতকরা ৭০ ভাগ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের হিসাবে দেশে গড় সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। করোনা মহামারীর কারণে ১৭ মাস বন্ধ ছিল শিক্ষাব্যবস্থা। শ্রেণি কার্যক্রম ছিল না। তবে সরকারি তথ্য বলছে, করোনায় সাক্ষরতার হার বেড়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিবিএসের ২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে করোনার মধ্যে গেল এক বছরে কোনো কার্যক্রম না থাকলেও সাক্ষরতার হার বেড়েছে দশমিক ৯০ শতাংশ। এ হিসেবে ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ হলো নিরক্ষরতার হার। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ১২ লক্ষ।
জাতিসংঘ ১৯৬৬ সালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৩ ধারায় শিক্ষাকে সর্বজনীন অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা মতো শিক্ষাও একটি প্রধান মৌলিক অধিকার হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু আমাদের সংবিধান শিক্ষাকে অধিকারের মর্যাদা দেয় নি। আমাদের সংবিধানে শিক্ষাকে একটি বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে শিক্ষার কথা বলা আছে। এ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ভাগে অন্তর্ভূক্ত। এ অনুচ্ছেদে মূলত তিনটি বিষয় উল্লেখ আছে। প্রথমত, এখানে আইনানুযায়ী সর্বজনীন, গণমুখি, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা আছে।
আমাদের সংবিধান যদিও শিক্ষাকে অধিকারের মর্যাদা দেয় নি। তবে রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা সাংবিধানিকভাবে অধিকার না হলেও আদর্শিকভাবে অধিকারের মর্যাদাসম্পন্ন।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মূল ভূমিকায় থাকবেন শিক্ষকেরা। অথচ এখন পর্যন্ত দেশে শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষকদের একটি বড় অংশের দক্ষতার ঘাটতি।
এক শিক্ষাবিদ মন্তব্য করেছেন ‘এক যুগ ধরে যে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের কোনো উপকারে আসছে না। গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষক এখনও সৃজনশীল বোঝেই না।’
ফলে যোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে শিক্ষকের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। দেশের মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় আমূল বদলে ফেলতে যে নতুন যে শিক্ষাক্রম তৈরি করা হলো। বড় এই পরিবর্তনের জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত- এ প্রশ্নটিই বারবার সামনে চলে আসছে।
মুবিন খান তিন দশক আগে ছাত্রজীবনে সংবাদপত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিককে তিনি কাজ করেছেন। মাঝে বছর দশক দেশের বাইরে ছিলেন। বিদেশে বসেই নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। এখনো সে দায়িত্বটি পালন করছেন।