১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য এ দেশের নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা সম্মিলিতভাবে লড়েছিল। ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। সহস্র ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও মুক্তির জন্য পুরুষের পাশাপাশি অসংখ্য সশস্ত্র নারী যোদ্ধা স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন ভাবে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছিলেন- তাঁদের অবদানও সমান গৌরবের। এটা নিশ্চিত যে, মুক্তিযুদ্ধ কালে নারীর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ছিল অত্যন্ত সনাতন ও পশ্চাদপদ। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল প্রায় দুই লাখ নারী। অন্যদিকে সুদীপ্ত মহিমায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নারীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন গৃহিণী। স্বল্পসংখ্যক ছিলেন শ্রমজীবী, নার্স, সমাজসেবী, গৃহকর্মী ও চাকরিজীবী। পাকিস্তানি সৈনিকদের পরাস্ত করে স্বদেশকে মুক্ত করতে পুরুষরা যখন সংগ্রামরত, নারীকে তখন দেশ মুক্ত করার পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব, মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য দুঃসাহসী নারীরা যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবে কাজ করেছেন। বহু নারী আছেন যাঁরা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন নি ঠিকই কিন্তু তাঁরা অন্তরালে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন, সেবা করেছেন, অনাহারী-অর্ধাহারী ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও মমতাময়ী মায়ের মতো, আবার কখনও বোনের মতো। কেউ কেউ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্থাপিত হাসপাতালে নার্স ও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার মতো বা কৌশলে তথ্য আদান-প্রদানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করেছেন অনেকে। এসব নারীরা এভাবেই কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছেন, আবার কখনও যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে থেকেই নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তৎকালীন সভানেত্রী সুফিয়া কামাল পাকিস্তানি বাহিনীর নজরদারিতে যুদ্ধের নয় মাস ঢাকায় তাঁর নিজ বাড়িতে ছিলেন। এ অবস্থাতেই তিনি নানা কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছিলেন যা তিনি তার দিনলিপিতে লিপিবদ্ধ করেন, যেটি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। সরাসরি সমরে অংশগ্রহণসহ নারীরা মুক্তিযুদ্ধকালে পরামর্শক, সাংস্কৃতিক প্রেরণাদাত্রী, কূটনীতিক চরিত্র এবং প্রশিক্ষকের ভূমিকায় যে অবদান রেখেছিলেন তা-ও ছিল একধরনের যুদ্ধ। ১৯৭১ সালে নারীদের বিভিন্ন সক্রিয় কর্মকাণ্ডই ছিল তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ। তাঁদের শারীরিকভাবে পাকিস্তানি হায়েনাদের দ্বারা যে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল, সেটি ছিল আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধেরই একটা অংশবিশেষ।
প্রকাশক মিলন নাথ কর্তৃক ১৯৯৭ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘একাত্তরের গেরিলা’ বইটির ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখক জহিরুল ইসলাম বলেন ‘একাত্তরের উত্তাল মার্চের ৭ তারিখে তৎকালীন রেসকোর্স, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঘোষণা দিলেন, ‘…আর যদি একটি গুলি চলে… প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’, সেই সময়েও ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা’র কাজে উদ্ধুদ্ধ হয়েছিলেন নারীরা। ফলে দেখা যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনা, ঈশ্বরদী, পাবনা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহসহ সব জেলায় নারীসমাজের প্রতিবাদী সভা ও মিছিল হয়েছে। এ সময় তারা জেলায়, শহরে-শহরে, এলাকায়-এলাকায় সংগঠিত হয়ে কুচকাওয়াজ ও অস্ত্র চালনার ট্রেনিংও শুরু করেন। ৯ মার্চ বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। এই কাজে নারীসমাজ ও ছাত্রসমাজ প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল।’
সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার কিশোরী, তরুণী, প্রৌঢ়া, এমনকি প্রবীণ অবিবাহিতা নারী ও বিবাহিতা নারী কীভাবে তাদের ক্ষতবিক্ষত জীবন পার করেছেন, তা কল্পনাতীত। বাঙালী জাতির উত্থানে যেমন মুক্তিযুদ্ধের বিশালতাকে কোনো মানদণ্ড দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না কোনোভাবেই, তেমনি এই বিশালতায় যেসব নারী বিভিন্ন অবস্থানে থেকেও মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন, তাঁদের অবদানকেও কোনোক্রমেই হেয় করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই সকল মহীয়ান মহীয়সীদের অনেকের নামই এখনও আমাদের অজানা, তাঁদের স¤পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য সংগ্রহের কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয় নি অদ্যাবধি। যদিও ইদানিং নারীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান স¤পর্কে সভা-সমাবেশে আলোচনা করা শুরু হয়েছে, এই বিষয়ে অনেকে লেখালেখিও করেছেন বিভিন্ন সময়, তারপরও মুক্তিযুদ্ধে নিপীড়নের অগ্নিসাক্ষী নারীরা বা লাঞ্ছিত নিপীড়িতরা ‘মা-বোন’ নামেই আজও প্রচার হচ্ছে বেশি। আর এ কারণেই সম্ভবত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ মঞ্চে উঠেই বলতে থাকেন ‘দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বলিদানের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা।’ আর আমরা তো আমাদের নারীদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা আনি নি। আমরা যুদ্ধ করে তাজা রক্ত আর প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। নারীদের ‘ইজ্জত’ কিংবা ‘সম্ভ্রম’-এর বিনিময় বাক্যটি নারীর জন্যে অপমানজনক- এটি এ দেশের নাগরিকেরা কবে অনুধাবন করবে? আদৌ করবে কি?
কেউই নারীদের সশস্ত্র যুদ্ধের বীরত্বগাথা বা অনন্য ভূমিকা স¤পর্কে খুব বেশি কিছু জানেন না বা আলোচনাও করেন না।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা নারীরা কতটা অসহায়ত্বের শিকার হয়েছিলেন, একথা অনেকেই ভুলে গিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছেন ‘একাত্তরের জননী’ গ্রন্থের রচয়িতা রমা চৌধুরী। তিনি ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮তে মারা যান। একাত্তরের নির্যাতনের শিকার অনেক নারীর মতোই তাঁর জীবনের ট্র্যাজেডি হলো যুদ্ধের পর স্বামীর গৃহে তাঁর ঠাঁই মেলে নি।
যুদ্ধকালে যে সব নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তাঁদের পূনর্বাসন প্রয়োজন ছিল, স্বামীহারা বিধবাদের প্রয়োজন ছিল আশ্রয়। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিকে উপেক্ষা করে এসবকেই তখন বড় করে দেখা হয়েছিল বলেই হয়ত তখন নারীদের ভূমিকাকে খুব একটা সামনে তুলে ধরা হয় নি। যে কারণে একজন বিথীকা বিশ্বাস বা শিশির কণা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি গানবোট উড়িয়ে দিলেও যুদ্ধ পরবর্তীকালে তাঁরা যথাযোগ্য বীরের মহিমায় অভিষিক্ত হতে পারেন নি। উপরন্তু তাঁদের ললাটে জোটে সামাজিক লাঞ্ছনা। যুদ্ধ শেষে এই বিথীকা বিশ্বাস ও শিশির কণাকে তাদের পরিবার গ্রহণ করে নি। ১৯৭১ সালের নারী নির্যাতনকে ঠেকিয়ে দিতেই বীরত্বের মহিমা দিয়ে তখন তাঁদের ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবিকতায় দেখা যায় এই শব্দটিকে সসম্মানে শ্রদ্ধা না করে বরং পরবর্তীতে অনেকের ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত বিদ্রæপাত্মক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করে তাঁদের চারপাশের মানুষরা। নারীর অবদানকে তুলে ধরতে গিয়ে আবার একই নারী বিভিন্ন নামে পরিচিতি পেয়েছেন লেখকদের লেখায়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, সেলিনা হোসেনের ‘ঘরগেরস্থির রাজনীতি (প্রথম প্রকাশ:২০০৮)’, আরেকটি গবেষণা ধাঁচের বই ‘আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা’ (সেলিনা হোসেন স¤পাদিত, প্রকাশ: ২০০৪), রোকেয়া কবীর ও মুজিব মেহদীর ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ (প্রথম প্রকাশ: ২০০৬) – বইগুলোতে একজন মুক্তিযোদ্ধা নারীর নাম ‘সখিনা বেগম’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মালেকা বেগমের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’, আমাদের কিশোরগঞ্জ ২০১১, দৈনিক ইত্তেফাক (৫ ডিসেম্বর, ২০১৪) পত্রিকাসহ আরও কয়েকটি পত্রিকার কলামে তাঁকে ‘সখিনা খাতুন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টি ফোর ডটকমের (১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪) রিপোর্টার মুহম্মদ আকবর তাঁর নাম ‘সখিনা বিবি’ বলে উল্লেখ করেছেন। বর্তমান প্রজন্ম কিভাবে বিচার করবে সঠিক নাম কোনটি? একই সাথে সখিনা বেগম/ বিবি/ খাতুন নামে পরিচিত এই নারী একটি দা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। মুক্তিযুদ্ধে সখিনা বিবির ব্যবহৃত দা-টি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রাখা আছে। দা-টিতে নামফলক হিসেবে ‘সখিনা বিবি’ লেখা রয়েছে বলে আকবর মুহম্মদ উল্লেখ করেন। তাহলে এমন বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ থাকার কথা নয়, তবুও হয়েছে। এই দা-টি নিয়েও কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। সেলিনা হোসেনের ‘ঘরগেরস্থির রাজনীতি’ বইতে বলা হয়েছে ৫জন পাকসেনা হত্যা করেন সখিনা বেগম। অথচ ‘আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা’ বইতে সখিনা বেগম ৫ জন কুখ্যাত রাজাকারকে হত্যা করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, দুটো বইতেই একই প্যারায় রিয়াজুল ইসলাম খানের প্রশংসা পত্রটির উল্লেখ আছে। দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টি ফোর ডটকমের রিপোর্টার মুহম্মদ আকবর জানিয়েছেন সখিনা বেগম/খাতুন/বিবি পাকিস্তানি ক্যা¤প থেকে পালিয়ে আসবার সময় দা খানা সাথে করে নিয়ে আসেন। কিন্তু ‘ঘরগেরস্থির রাজনীতি’তে লেখা হয়েছে সখিনা বেগম বাড়ি থেকে ‘দা’ সঙ্গে নিয়েই যুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন। ‘আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা’ বইতেও দা’টিকে তাঁর নিজেরই বলা হয়েছে। কোন্্ ভাষ্যটিকে আমরা সঠিক বলে ধরে নেব এখন?
যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে নারীদের অবদানকে হেয় করার এমন উদাহরণ অসংখ্য। স্বাধীনতার ২৯ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যক্ষ অবদানের স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন নারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ বিস্মৃতি ও অবহেলা শেষে ইতিহাস এখন বদলাতে শুরু করেছে। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন তিনজন। ১৯৭২ সালে ক্যাপ্টেন সিতারা বেগমের পর তারামন বিবি এই খেতাব পান ১৯৭৩ সালে। এর অনেক বছর পর ১৯৯৭ সালে বীর প্রতীক খেতাব পান কাঁকন বিবি। তারামন বিবি ২০১৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন এবং এই খেতাবপ্রাপ্ত দুজনই ব্যাপক সময় ধরে ছিলেন বিস্মৃতির অন্ধকারে।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্ম‚ল কমিটি’ ‘৭১এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারী সমাজের অবদান’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা উঠে আসে আলোচনায়। স্মারক বক্তৃতায় সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নারীর জীবন অধ্যয়নের একটি বড় দিক। এই যুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিলেন স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ছিল তার জীবন বাজি রাখার ঘটনা। সেলিনা হোসেন প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীকে মূলধারায় স্থাপন না করার ফলে নারীর প্রকৃত ইতিহাস যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি। মুক্তিযুদ্ধে নারী যে গৌরবগাথা রচনা করেছিলেন তা ধর্ষিত এবং নির্যাতিত নারীর ভূমিকায় অদৃশ্য হয়ে আছে। প্রকৃত অবদান খুঁজে নারীকে মূলধারায় না আনার আরও একটি কারণ নিম্নবর্গের নারীরাই ব্যাপকভাবে এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান কোনো অংশে কম নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান অনেক বেশি, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কখনও স্বীকৃতি পায়নি। এর কারণ হচ্ছে সামন্ততান্ত্রিক ও ধর্মীয় মৌলবাদী ধ্যানধারণা, যা মানুষের মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রবাসে যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠন করেছেন তাদের নামও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সংযুক্ত করছে। এক্ষেত্রে সবার আগে কবি সুফিয়া কামাল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মতো যে সব সাহসী নারীরা শত্রু কবলিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যুক্ত করার জন্য নির্ম‚ল কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের অবদানকে অবলোকন করা দরকার আন্তরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলার নারী সমাজ তাঁদের সর্বংসহা চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বলেই স্বপ্নের স্বাধীনতা তরান্বিত হয়েছিল। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যে বিশাল একটি অবদান রেখেছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, তার বহু প্রমাণ পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস ঘাটলে। তাই এখনই সময় এই বিষয়ে রাষ্ট্রীয় তদারকির মাধ্যমে আরও বেশি ফলপ্রসু গবেষণার সমন্বয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তথ্য ও নামের তালিকা লিপিবদ্ধ করার। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানকে যথাযথভাবে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
‘জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধুদের ত্যাগে হয়েছে মহীয়ান।
কো› রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কতো মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি’ কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রাখিছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী’