মানুষ যখন প্রশ্ন করতে শুরু করে, ‘আমি কে?’, ‘কোথা থেকে এলাম?’, ‘কেন আমি এই পৃথিবীতে এসেছি?’ – এ ধরনের ‘আমি’ এবং ‘আমার’ যাবতীয় সত্তার প্রশ্নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মানব জীবন। যতক্ষণ পর্যন্ত এ প্রশ্নগুলো মনের কোণে উদিত না হয়, ততক্ষণ মানুষ কেবলই মনুষ্যরূপী জীব মাত্র। সমাজের সামাজিকতা এবং অস্থির মানসিকতার করালগ্রাসে জীবন ধারণের চেয়ে জীবন পালনই কঠিন রূপ নিয়েছে। আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে অবচেতন মনের শুদ্ধি প্রক্রিয়া করণের সকল পথই আজ রুদ্ধ। কেননা মানুষের মন ও মানসিকতার প্রসার চলছে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায়। কালের স্রোতে দিনের পর দিন তাই প্রতিনিয়ত মানসিকতা পরিবর্তিত হচ্ছে, হচ্ছে স্তব্ধ। জীবন প্রবাহিত হয়ে চলেছে ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চে।
জীবনের তরীতে প্রতিটি আত্মশুদ্ধির গান ও কথা আজ জড়বাদে মুখরিত। বিবেকের গান আজ কারোই ভালো লাগে না। প্রাণহীন, স্পন্দনহীন এবং সংকীর্ণতা- এই তিনের সমাহারে মানব সমাজও আজ জড়বাদ। এক কথায় বরবাদ ও বলা চলে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা সেকারণে সর্বগ্রাসী, সমস্যাবহুল আর আবর্জনার মতোই দুঃসহ। সাধনার দরজা রুদ্ধ। কিন্তু যাতনার দরজা উন্মুক্ত। কেননা প্রতিনিয়ত জীবন কেবলই রঞ্জিত হচ্ছে নানা ধরনের ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের রঙ্গে। আর এই কর্তৃত্বের লোভ পুরণ করতে গিয়েই সৃষ্টি হচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন নতুন সমস্যা।
জীবনের জন্য প্রয়োজন কর্ম, জ্ঞান, প্রেম এই তিন শক্তি- যা আজ মানব হৃদয়ে অস্ফুট ও অবিশুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। যদি অন্তর্নিহিত তিনটি গুণ উপযুক্ত শিক্ষা ও সাধনা দিয়ে বিশুদ্ধ ও পূর্ণরূপে মানুষের চরিত্রে বিকশিত করা যায়, তাহলেই মানুষ সমাজবাদী হয়ে উঠতে পারে। তখনই তার মধ্যে যথার্থ ভালোবাসা জাগ্রত হতে পারে। সেকারণেই প্রেমিকের দৃষ্টিতে বিশ্বের সর্ব জীবে সম্প্রীতি, সেবা ও সর্ব জীবের তুষ্টি সাধন কর্তব্য হয়ে দাড়ায়। সমস্ত সৃষ্টিই তাই প্রেমিকের কাছে ভালোবাসার নিপুণতার সাক্ষাৎ দিতে থাকে। এ কারণে প্রেমিকরাই এই মরণ জগতে জন্ম নিয়েও অমর হয়ে যায়। তাদের প্রেমের লক্ষ্যস্থল হয় মানবসমাজ রূপের সাধন দ্বারা প্রেমময়। যিনি অনন্ত ও অব্যক্ত রূপে বিরাজমান তার সন্ধান করা। প্রেমিকের কাছে তাই প্রেমই সর্ব সাধনার হাতিয়ার।
মোট কথা বর্তমান পৃথিবীতে মানব সমাজ হচ্ছে ক্ষমতার ভৃত্য। এবং এই ক্ষমতা প্রতিটি মানুষকে ধর্মের মূল কাঠামো থেকে দূরে সরিয়ে মানব জীবনে চরম আঘাত হানছে। যার ভয়াবহতা আজকের বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা। বস্তুত ‘ক্ষমতা’ বলে আসলে কিছু নেই। ‘ক্ষমতা’ আসলে ‘দায়িত্ব’। পরিচালনার দায়টিকেই আমরা মানুষেরা ‘ক্ষমতা’ বলছি। সেকারণে মানুষ নিজেই উপযাচক হয়ে সকল ‘কর্তৃত্ব’ নিয়ে ‘শাসন’ করতে চেয়ে নিজেকে ‘শাসক’ হিসেবে জাহির করতে চাইছে।
এ থেকে উত্তরণের জন্য ধর্মীয় প্রদত্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সকল আবর্জনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। আবিস্কার করতে হবে জীবনের গন্তব্য বা লক্ষ্যস্থল। পৌঁছাতে হবে অভিষ্ট লক্ষ্যে। তবেই সার্থক হবে মানব জীবন।
লেখক: সম্পাদক, অনুস্বর।
সাংবাদিক ও লেখক শাহ্ জে. চৌধুরী আমেরিকার নিউ ইয়র্ক প্রবাসী। নিউ ইয়র্কের রূপসী বাংলা এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্কের প্রধান ব্যক্তি। এছাড়া তিনি অধীনে রয়েছে নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা রূপসী বাংলার সম্পাদক এবং নিউ ইয়র্কের অন্যতম বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল ‘বাংলা চ্যানেল’-এর চেয়ারম্যান।