এক
মোরগ ও মুরগি
মোরগ আর মুরগির সাথে জমজমাট প্রেম থাকলেও তাদের বিয়েটা হয় নি। মুরগির বিয়ে হবার পর মোরগের দেবদাস হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না। কিন্তু মুরগি ছিল নিদারুন সুখে। কারণ সুজাতারা সবসময় সুখে থাকে…
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু শেষ করা যাচ্ছে না। পাঁচ বছর পর মুরগির সাথে প্রাক্তন প্রেমিক মোরগের দেখা। মোরগ তখন আড্ডা মারছিল পানকৌড়ির সাথে। দুঃখ নিয়ে মোরগ জানতে চাইলো, মুরগি আমাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলতে পারলা?
মুরগি খুব ভাব নিয়ে উত্তর দিলো বাবা চাইতেন আমি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বা নেভী’র কাউকে বিয়ে করি। বাবার কথা রাখতে আমি এক রাজহাঁসকেই বিয়ে করলাম!
মোরগ কিছু বলার আগে পানকৌড়ি বলল, তাহলে তো আমাকে বিয়ে করতে পারতিসরে মুরগি!
মুরগি খানিক জোর গলায় দম্ভ নিয়ে বলল, তুই তো পানকৌড়ি। ছোট জাত! এখনও ডুবে ডুবে জল খাস। আর আমি যাকে বিয়ে করেছি সে রাজবংশের মানে রাজহাঁস! সে ডুবে ডুবে বা জল ঘোলা করে খায় না!
মুরগি চলে গেলে মোরগ দেবদাসের মতো কবিতার কথাই ভাবলো। পানকৌড়িকে কাব্য করে বলল, শুধু একবার চলে গেলে নারীরা ফেরে না
কবিতায় আছে…
বনলতা সেন কী এখনও শান্তি দেয়?
দু-দণ্ড ভালোবাসে?
দুই
আলু ও ঢেঁড়স
বয়সকালে আলু ঢেঁড়সকে বলেছিল, আই লাভ ইউ!
ঢেঁড়স উত্তরে বলেছিল, ‘আমি স্লিম ও সেক্সি। আলু তুমি গবেট ও সস্তা। তোমার আমার প্রেম হতে পারে না’। আলু দুঃখ পেয়ে অনেকের কাছে গেল। তার কপাল ভালো কিনা সেই বিচার কেউ করে নি! তবে কেউ আলুকে ফেলতে পারল না। জুটি হলো অনেকের সাথে। যেমন,
লাউ ও আলু।
কুমড়া ও আলু।
টমেটো ও আলু।
করোল্লা ও আলু।
ক্যাপসিক্যাম ও আলু।
পুঁইশাক ও আলু।
মটরশুটি ও আলু।
গাজর ও আলু।
মূলা ও আলু।
এভাবে বাড়তেই থাকল আলুর প্রেম ও জনপ্রিয়তা। দামও বাড়ল একসময়। সবই দূর থেকে দেখতে হলো ঢেঁড়সকে। কেউ আর ঢেঁড়সের কাছে যেয়ে প্রেম প্রস্তাব দিল না। ঢেঁড়স একাই ছিল, একাই থেকে গেল! প্রেম অনেক হয়েছে। আলু ও ঢেঁড়সকে এখন একটু একা একা থাকতে দিন। কেউ এখনও জানতে পারে নি আলু ঢেড়সকে আজও ভুলতে পেরেছে কিনা অথবা একাকী জীবনে ঢেঁড়স কতটা সুখে আছে!
আলুর কিছু টাকা পয়সা হলেও সে আজও বুঝতে পারে নি এই টাকাপয়সা সুখ একটুও বাড়ায় কিনা!
তিন
সজারু ও সুঁই!
গাধা নিয়ে মানুষের কৌতুহল সবকালেই একরকম… গাধা নিয়ে হাজারো গল্প চালু আছে, যেমন,
চিড়িয়াখানায় পাশাপাশি দুই গাধা বসে আছে। ছেলে তার বাবার কাছে জানতে চাইল-বাবা এই দুই গাধা কী বিবাহিত?
বাবা হ্যাঁ বলে মাথা ঝাঁকালেন।
ছেলে আবারও জানতে চাইল বাবা গাধারাও বিয়ে করে?
বাবা উত্তর দিলেন, হুম, শুধুমাত্র গাধারাই বিয়ে করে..
গাধাদের কাছে পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি করার গল্পও জনপ্রিয়… এখনও নাকি বিক্রি হয়.. তবে গাধাদের নিয়ে একটা গল্প তেমন জনপ্রিয় নয়..
সিংহ এমন এক সময় অসুস্থ হলেন যেদিন তার পশুপাখির ভেতর কাজ ভাগ করে দেবার কথা। সেদিন শিয়াল ও নেকড়ে উপস্থিত ছিল না। রাজা গাধাকে দিলেন কাজ ভাগ করতে।
গাধা শিয়ালকে দিল বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব।
নেকড়ে, বাঘ আর চিতাকে দিল পশুদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব..
হরিণকে দিল সিনেমার নায়িকা হবার দায়িত্ব..
কাজ ভাগ হলো। সবাই যে যার মতো ফিরে গেল। থেকে গেল শুধু সজারু… সে কোনো কাজ পায় নি… সজারু কাজের আর্জি জানালে গাধা বলল শুধু টয়লেট করার পরে ধোয়ামোছার কাজ বাকি আছে! সজারু তুই আধুনিক টিস্যু হিসেবে কাজ কর!!
সজারু সিংহের সামনে কান্না শুরু করে দিলো! কাঁদতে কাঁদতে বলল- আমার সারা গায়ে সূঁই! আমাকে দয়া করে সূঁই কেনার দায়িত্বটা দেন…
লেখক: লেখক, নাট্যকার ও কলামিস্ট, হেড অব প্রোগ্রাম, বৈশাখী টেলিভিশন